অয়ন শীলের চুঁচুড়ার আবাসনে সিবিআই হানা। পাহারায় কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী। বুধবার। নিজস্ব চিত্র Sourced by the ABP
রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে প্রায় আড়াই মাস আগে চুঁচুড়ার জগুদাসপাড়ায় প্রোমোটার অয়ন শীলের ফ্ল্যাট ও পৈতৃক বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। তাঁর কলকাতার ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে পুর-নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু নথি মিলেছিল বলেও দাবি করেছিলেন ইডি-র তদন্তকারীরা। গ্রেফতার হয়েছিলেন অয়ন। রাজ্যে পুর-নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে নেমে বুধবার তাঁর জগুদাসপাড়ার ফ্ল্যাট এবং পৈতৃক বাড়িতেও হানা দিল সিবিআইয়ের দু’টি দল।
সূত্রের খবর, দু'জায়গা থেকেই বেশ কিছু নথি উদ্ধার হয়েছে। তবে, সিবিআই আধিকারিকরা এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেননি। তাঁরা বেরিয়ে যেতেই অয়নের বাড়ির গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন পরিবারের লোকেরা। ডাকাডাকিতেও কেউ সাড়া দেননি।
হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার কাছে বিগত কয়েক বছরে নিয়োগের তথ্য কিছুদিন আগেই চেয়ে পাঠিয়েছিল রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। পুরসভা সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের জন্যেই দফতর সেই তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছিল। ক’দিন আগে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে অয়নের পাশাপাশি হুগলিরই দুই তৃণমূল যুব নেতা (এখন বহিষ্কৃত) কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হন। শান্তনুর সঙ্গে অয়নের যোগ আগেই পরিষ্কার হয়েছে। পঞ্চায়েত-যোগও ছিল অয়নের। ২০১৭-’১৮ সালে অয়ন পান্ডুয়া ব্লকের একটি পঞ্চায়েতের এগ্জ়িকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলেন। সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত নিয়োগেও ছড়ি ঘোরাতেন অয়ন। অর্থাৎ, তদন্ত এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতিতে অয়নের লম্বা যোগের বিষয়টি ক্রমশই স্পষ্ট হয়েছে। এ হেন পরিস্থিতিতে অয়নের ফ্ল্যাট ও বাড়িতে সিবিআই তল্লাশিতে মেলা নথি বাড়তি কিছু যোগ করে কি না, সেটাই দেখার।
এ দিন জগুদাসপাড়ায় সকাল ১১টা নাগাদ অয়নের বাড়ি এবং ফ্ল্যাট— দু’জায়গায় সিবিআইয়ের দু’টি দল ঢোকে। প্রতি দলে প্রায় পাঁচ জন করে ছিলেন। দুপুর ২টো ১০ নাগাদ ফ্ল্যাট থেকে একটি সাদা প্যাকেটে মোড়ানো কাগজ নিয়ে বেরিয়ে যান তাঁরা। অন্যদিকে, তখনও অয়নের বাড়িতে ছিল একটি দল। বাইরে ছিল আধাসেনার প্রহরা। দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ সেখান থেকে বেরিয়ে যান আধিকারিকরা। এক আধিকারিকের হাতে ছিল একটি বড় খাম।
গত ১৮ মার্চ চুঁচুড়ায় অয়নের ফ্ল্যাট ও বাড়িতে প্রথম হানা দেয় ইডি। একইসঙ্গে সে দিন বলাগড়ে শান্তনুর বাড়ি, রিসর্ট ও হোটেলেও অভিযান চলে। শান্তনুকে আগেই, গত ১০ মার্চ গ্রেফতার করেছিল ইডি। হানা দেওয়ার দিনই অয়নকে আটক করে নিয়েযায় ইডি। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হয়।
এ দিনের সিবিআই তল্লাশির পরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘২০১১ সালের পরে রাজ্যে সব নিয়োগেই দুর্নীতি হয়েছে। হুগলি থেকেই একের পর এক গ্রেফতার হচ্ছে। তদন্তের পরই পরিষ্কার হয়ে যাবে, তৃণমূল সরকার চাকরি-চোর।’’
জেলার প্রথম সারির তৃণমূল নেতাদের পাল্টা দাবি, ‘‘যারা দোষ করেছে, সাজা পাবে। কিন্তু এর জন্য পুরো তৃণমূল সরকারকে দায়ী করা যায় না।’’