প্রচেষ্টা: আরামবাগ পুরসভার উদ্যোগে প্লাস্টিকমুক্ত করার প্রচার অভিযান। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ হয়েছে শহরে। অভিযান চালাচ্ছে পুরসভাগুলি। জরিমানা করা হচ্ছে। এ বার দুই জেলার গ্রামাঞ্চলকেও একই ভাবে প্লাস্টিকমুক্ত করতে উদ্যোগী হল প্রশাসন। তবে, প্রথম পর্বে গ্রামাঞ্চলের কোথাও জরিমানা করা হচ্ছে না। জোর দেওয়া হয়েছে সচেতনতা বৃদ্ধিতে।
‘মিশন নির্মল বাংলা’ প্রকল্পে সোমবার থেকে ‘প্লাস্টিকমুক্ত গ্রাম’ অভিযান শুরু হয়েছে হুগলিতে। আগামী ২২ জুলাই পর্যন্ত নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জেলার ১৮টি ব্লকের ২০৭টি পঞ্চায়েতে এই প্রচারাভিযান চলবে বলে জানান অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) শান্তনু বালা।
বিডিওরা মনে করছেন, জেলাকে সার্বিক ভাবে ‘নির্মল’ করতে বিশেষ কার্যকর হবে এই উদ্যোগ। যথেচ্ছ প্লাস্টিক-পলিথিন অনেক জায়গায় জল নিকাশির সমস্যার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেই বাধা কাটবে। একইসঙ্গে গ্রামে ডেঙ্গি-সহ মশাবাহিত রোগের প্রকোপও কমবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ হয়েছে। সরকারি নির্দেশিকা মতোই সব পঞ্চায়েতে এ সংক্রান্ত উৎপাদন, আমদানি, মজুত এবং ব্যবহার বন্ধের জন্য প্রচার শুরু হয়েছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাইকে প্রচার ছাড়াও থাকছে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ রোধে শোভাযাত্রা, আলোচনা, ছবি-ভিডিয়ো প্রদর্শনীর ব্যবস্থা এবং প্রতিটি পঞ্চায়েতে ‘পাড়া বৈঠক’।
হাওড়ায় ইতিমধ্যেই সাঁকরাইল, পাঁচলা এবং বাগনান-২ ব্লকে সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালানো হয়েছে। মঙ্গলবার বাগনান-১ ব্লকে বিভিন্ন পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করে জেলা প্রশাসন। প্রশাসন সূত্রের খবর, বৈঠকে প্রধানদের বলা হয়েছে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করতে তাঁরা যেন গ্রামবাসীদের মধ্যে প্রচার চালান। হাওড়ার বাকি ব্লকগুলিতেও একই ধরনের কর্মসূচি পালিত হবে।
তবে, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের বিকল্প কী, এ প্রশ্ন উঠছে গ্রামে। ছোট ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন, বড় ব্যবসায়ীরা কাগজ বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে সমর্থ হলেও তাঁরা কী করবেন? তাঁদেরও কাগজ বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে হলে যে দাম দিতে হবে, তাতে লাভ থাকবে না।
হাওড়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, সে ক্ষেত্রে ক্রেতাদেরই বাড়ি থেকে ব্যাগ আনতে হবে। অনেকেই খালি হাতে বাজারে চলে আসেন। আর প্লাস্টিকের প্যাকেটে বাজার নিয়ে ফেরেন। সেটা করতে দেওয়া যাবে না। জেলাশাসক মুক্তা আর্য বলেন, ‘‘সরকারের নির্দেশিকা মেনে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে যা যা করণীয় সবই করা হবে।’’
উলুবেড়িয়া পুরসভার দাবি, নির্দেশ অমান্যকারীদের থেকে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। জোর দেওয়া হয়েছে সচেতনতা বৃদ্ধিতে। পুরসভার হয়ে আগামী সপ্তাহ থেকে বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাবেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। সবাইকে বোঝানো হবে, তাঁরা যেন বাড়ি থেকে ব্যাগ নিয়ে বাজারে যান।
পুরপ্রধান অভয় দাস বলেন, ‘‘নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার অনেকটাই কমেছে। মানুষ সচেতন হলে আরও কমবে। কেউ যদি ব্যাগ নিয়ে বাজারে যান, তা হলে তাঁকে প্লাস্টিকের উপরে নির্ভর করতে হয় না। ব্যবসায়ীদেরও সুবিধা হয়।’’
বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের অনেকেই জানান, তাঁরা ৭৫ মাইক্রনের বেশি পুরু প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করছেন। মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁরা কাগজ এবং কলাপাতায় মুড়ে ক্রেতাদের মাছ দিচ্ছেন।