ব্যান্ডেল পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ব্যবসায়ীরা। ইনসেটে চাঁদার বিল। ছবি: তাপস ঘোষ।
দাবিমতো কালীপুজোর চাঁদা দিতে চাননি। এই ‘অপরাধে’ একটি ক্লাবের সদস্যরা দোকান থেকে এক ব্যবসায়ীকে টেনে বের করে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করল বলে অভিযোগ। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির সাহাগঞ্জের ডানলপ বাজার এলাকায়। প্রহৃত সুব্রত সমাদ্দারের চোখে গুরুতর আঘাত লেগেছে বলে জানা গিয়েছে।
চুঁচুড়া থানায় তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। ঘটনার জেরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত।
চন্দননগর কমিশনারেটের এক আধিকারিক জানান, ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তরা পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে। ওই পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘সব খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে পুজোর অনুমতি বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’ ক্লাব সদস্যদের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাবে তালা।
বছর চল্লিশের ওই ব্যবসায়ীর বাড়ি চুঁচুড়ার পাঙ্খাটুলিতে। ডানলপ বাজারে জিটি রোডের ধারে তাঁর মুদিখানা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ কালীপুজোর চাঁদার জন্য মোটরবাইকে চেপে স্থানীয় ‘সাহাগঞ্জ মোল্লাপোতা ইউনিয়ন সঙ্ঘ’-এর জনা দশেক সদস্য তাঁর দোকানে আসে। তারা ৫০১ টাকা চাঁদা দাবি করে। ওই অঙ্কের একটি বিল তাঁর হাতে ধরিয়ে দেয়। সুব্রত জানান, তিনি ৫১ টাকার বেশি দিতে পারবেন না। চাঁদা আদায়কারীরা জানিয়ে দেয়, অত কম টাকা তারা নেবে না। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা হয়।
অভিযোগ, তখনই ওই যুবকেরা সুব্রতর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রথমে দোকানে ঢুকে তাঁকে মারধর করে। তার পরে দোকান থেকে টেনে বের করে রাস্তায় ফেলে কিল, চড়, ঘুষি মারতে থাকে। সুব্রতর ভাই দোকানে ছিলেন। দাদাকে বাঁচাতে গেলে তাঁকেও চড়-থাপ্পড় মারা হয় বলে অভিযোগ। সুব্রতকে ওই ভাবে মারতে দেখে আশপাশের দোকানদাররা ছুটে এলে হামলাকারীরা বাইক ছুটিয়ে পালায়। প্রহৃত ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে চুঁচুড়া ইমামবাড়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে তিনি থানায় এফআইআর করেন। তিনি বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির জন্য ব্যবসার অবস্থা খারাপ। ওঁদের বলেছিলাম, অত টাকা চাঁদা দিতে পারব না। তার জন্য এমন ভাবে মারবে, ভাবতে পারিনি।’’ সাহাগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন পাল বলেন, ‘‘এমন ঘটনা এখানে আগে ঘটেনি। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।’’ স্থানীয় বাসিন্দারাও ঘটনার নিন্দা করেছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় বিধায়ক অসিত মজুমদার ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থার আশ্বাস দেন। তবে, ক্লাব সদস্যদের দেখা পাননি বলে তিনি জানান। বিধায়ক বলেন, ‘‘চাঁদার জুলুম মেনে নেওয়া হবে না। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হবে। প্রয়োজনে পুজোর অনুমতি বন্ধের জন্যও পুলিশকে বলব।’’