Jagadhatri Puja 2023

ভিড় কম, জগদ্ধাত্রীর শহরে ব্যবসা মন্দা

অতিমারি পর্বের দু’বছর বাদ দিলে কবে শহরের প্রধান উৎসবে এত কম ভিড় হয়েছে, মনে করতে পারছেন না শহরবাসীর অনেকেই। ভিড় কম হওয়ার কথা মানছে পুলিশও।

Advertisement

সুদীপ দাস

চন্দননগর শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৫১
Share:

ক্রেতার ভিড় নেই। শুয়ে-বসেই দিন কাটল বাইরে থেকে আসা বিক্রেতাদের। —নিজস্ব চিত্র।

আয়োজনে ঘাটতি ছিল না। ষষ্ঠী-সপ্তমী একদিনে হওয়ায় এ বার চন্দননগরে দশমীতে জগদ্ধাত্রীর বিসর্জন ও শোভাযাত্রা হয়নি। ফলে, পুজোর দিনও কমেনি। কিন্তু চেনা জনসমুদ্রের দেখা মিলল কই! আজ, একাদশীতে শোভাযাত্রা রয়েছে। উৎসবের শেষ প্রহরে ভিড় কি বাড়বে! চিন্তায় ব্যবসায়ীদের অনেকেই। কারণ, ভিড় কম হওয়ায় পুজোর চার দিনে ব্যবসা তেমন জমেনি বলে তাঁদের দাবি।

Advertisement

অতিমারি পর্বের দু’বছর বাদ দিলে কবে শহরের প্রধান উৎসবে এত কম ভিড় হয়েছে, মনে করতে পারছেন না শহরবাসীর অনেকেই। ভিড় কম হওয়ার কথা মানছে পুলিশও।

কিন্তু কেন?

Advertisement

সামন আসছে নানা কারণ। কারও দাবি, ছট-কার্তিক ও জগদ্ধাত্রী পুজো একসঙ্গে পুজো পড়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি। কারও দাবি, স্কুলে-স্কুলে পরীক্ষা চলায় অভিভাবকেরা সন্তানদের নিয়ে বেরোননি। আবার গ্রামের দিকে ধান কাটা হচ্ছে বলে গ্রামবাসীরাও চন্দননগরমুখো হননি বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

প্রতি বছরই পুজোর দিনগুলিতে চন্দননগরে ভিন্ জেলা থেকে বহু ছোট ব্যবসায়ী এসে হাজির হন। অসংখ্য অস্থায়ী স্টল তৈরি হয়। কোনওটি খাবারের, কোনওটি খেলনার, গৃহস্থালির টুকিটাকি, মনিহারি জিনিস, শিল্পকর্ম— কার্যত কিছুই বাদ থাকে না। প্রায় ২৪ ঘণ্টাই ব্যবসা চলে। বড় রেস্তরাঁগুলিতে লম্বা লাইন পড়ে। সেই ছবি এ বার দেখা যায়নি।

নদিয়ার বাগমোড়ের বিশ্বনাথ বিশ্বাস ৩৫ বছর ধরে জগদ্ধাত্রী পুজোয় এ শহরে ব্যবসা করতে আসেন। চুঁচুড়া থেকে চন্দননগরের ‘প্রবেশদ্বার’ তালডাঙায় বাদাম, জিলিপির পসরা সাজিয়ে বসেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর সময়েও (১৯৮৪ সালের সপ্তমীর দিন) এত খারাপ ব্যবসা হয়নি। এ বছর ছট, কার্তিক, জগদ্ধাত্রী পুজো সব একসঙ্গে পড়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি।’’ তাঁর দাবি, গত বছরও দেড় লক্ষ টাকার খাদ্যসামগ্রী নবমীর সকালেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। তড়িঘড়ি আরও ৩০ হাজার টাকার খাবার আনতে হয়। এ বার শুরুতে আনা সামগ্রীই শেষ হয়নি বলে তিনি জানান।

তালডাঙার বাসিন্দা সুশান্ত সাহাও প্রতি বছর খাবারের দোকান দেন। এ বারের জগদ্ধাত্রীতে তিনিও মন্দার মুখ দেখেছেন বলে দাবি। উত্তর ২৪ পরগনার মছলন্দপুরের এক বাসিন্দা বহু বছর ধরেই এখানে ‘ঘটি গরম’ বিক্রি করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘গত বারও প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার টাকার বিক্রি হয়েছে। এ বার ষষ্ঠী থেকে নবমী— বিক্রি পাঁচ হাজারেও পৌঁছয়নি।’’

এ শহরে পুজো দেখতে ভিড় হয় সকাল থেকেই। রাতে বাড়ে। ষষ্ঠীতে বিশ্বকাপের ফাইনাল থাকায় অনেকেই ভেবেছিলেন, খেলা শেষের পরে ভিড় বাড়বে। কিন্তু তা কোনও দিনই সে ভাবে হয়নি। মানকুন্ডু স্টেশন রোডের কয়েকটি বড় পুজো, দৈবকপাড়া, সন্তান সঙ্ঘ, হেলাপুকুর প্রভৃতি এলাকার মণ্ডপগুলিতে তুলনায় বেশি দর্শনার্থী থাকলেও শহরের মূল রাস্তাগুলিতে ভিড়ের চলমান ছবি দেখা মেলেনি বলে অনেকেরই দাবি। রাস্তাঘাট তুলনায় অনেকটাই ফাঁকা ছিল চার দিন।

চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তা মানছেন, ভিড় অনেকটাই কম হয়েছে। যে জায়গায় ৫ হাজার লোক থাকার কথা, সেখানে মেরেকেটে হাজার দেড়েক লোক ছিল। ওই পুলিশকর্তার ধারণা, ‘‘স্কুলে-স্কুলে পরীক্ষার পাশাপাশি এক মাসের মধ্যে একাধিক পুজো পড়ে যাওয়া।’’

চন্দননগর গির্জার কাছে পুজোর ক’দিন খেলনা বিক্রি করেন শহরের পাদ্রিপাড়ার বাসিন্দা রঘুনাথ দাস। তিনি বলেন, "গ্রাম থেকে আসা দর্শনার্থীরাই মূলত খেলনা কেনেন। এ বছর অঘ্রাণে পুজো পড়েছে। গ্রামের মানুষ ধান কাটায় ব্যস্ত। ফলে, আমার বিক্রিবাটাও মার খেল।"

মানকুন্ডুর এক বাসিন্দাকে ব্যবসার খাতিরে পুজোতেও প্রতিদিন চুঁচুড়ায় যেতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি বছর সন্ধ্যায় জিটি রোড দিয়ে বাইক চালাতে কালাঘাম ছুটে যায়। এ বার তেমনটা হয়নি।" জ্যোতির মোড়ের কাছে তেমাথা এলাকার এক রেস্তরাঁ মালিকও জানান, এ বারে লোক কম, ব্যবসা ভাল হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement