বিকিকিনি: পান্ডুয়ার একটি দোকানে ঝাঁটা কেনাবেচা চলছে (বাঁ দিকে) উলুবেড়িয়ার একটি সোনার দোকানে ভিড়। রবিবার। ছবি: সুশান্ত সরকার ও সুব্রত জানা
গত দু’বছরের করোনা-পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে অনেকটা। ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছেন সকলে। খরা কাটিয়ে চলতি বছরের পুজোর বাজার জমেছিল ভালই। শনিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার বিকেল পর্যন্ত হাওড়া ও হুগলির ধনতেরসের বাজারও রইল জমজমাট। সোনার হালকা গয়না, রুপোর কয়েন, মূর্তির পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বিকোল ঝাঁটাও।
কার্তিক মাসের ত্রয়োদশী তিথিতে অর্থাৎ, দীপান্বিতা কালীপুজোর দু’দিন আগে ধনসম্পদ বৃদ্ধি এবং পরিবারের সকলের মঙ্গল কামনা করে লক্ষ্মী, ধন্বন্তরি এবং কুবেরের পুজো করার রীতি। বিশেষ করে উত্তর ভারতের মানুষদের মধ্যে এই পুজোর চল রয়েছে। ধনতেরস উপলক্ষে সোনা, রুপো বা বিভিন্ন ধাতু কেনেন তাঁরা। তবে গত কয়েক বছর ধরে বাঙালিদের মধ্যেও ধনতেরস পালনের হিড়িক শুরু হয়েছে। কেউ সোনা, রুপোর গয়না কেনেন। আবার কেউ তামা, পিতলের বাসনপত্র।
আরামবাগের সোনা-রুপোর ব্যবসায়ীরা জানান, আগে কিছু চালকল মালিক-সহ উচ্চবিত্তের মানুষ এই সময় কেনাকাটা করতেন। তবে বছর দশেক ধরে সাধারণ মধ্যবিত্তরাও কেনাকাটার দিকে ঝুঁকছেন। শহরের পুরনো গয়নার দোকানগুলোর মধ্যে অন্যতম পি সি সেন রোডের এক ব্যবসায়ী সুজিত দে বলেন, “সোনার চেন, চিক, নেকলেস কিনছেন মানুষ। তাছাড়া রুপোর ডাব বা ছোট দেবমূর্তিও বিক্রিহয়েছে ভাল।’’
চুঁচুড়ার বিভিন্ন সোনার দোকানেও খদ্দেরের ভিড় ছিল ভাল। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, সোনার দামবৃদ্ধির কারণে খদ্দেররা পুরনো সোনা ভেঙে নতুন গয়না গড়ানোতেই বেশি আগ্রহী। চুঁচুড়ার বাসিন্দা দেবাঞ্জনা বসু বসেন, ‘‘৪৮ হাজার টাকারও বেশি সোনার ভরি। মধ্যবিত্তের সংসারে সোনার গয়না বিলাসিতা মাত্র। তবু ধনতেরস উপলক্ষে একটা নাকছাবি করতে দিয়েছি।’’ ডানকুনি হাউজ়িং মোড়ের এক গয়নার দোকানের মালিক শৈলেন ঘোষ বলেন, ‘‘করোনা-পূর্ববতী বাজারের অনেকটাই এ বার ফিরে এসেছে। সোনার চেন, রুপোর কয়েন বেশি বিক্রি হয়েছে।’’
ধনতেরসে হাওড়া গ্রামীণের বিভিন্ন সোনার দোকানে বিক্রি বেড়েছে গত দু’বছরের তুলনায় অনেকটাই। ব্যবসায়ীরা জানালেন, হালকা ওজনের সোনার গয়না বিকিয়েছে বেশি। তার মধ্যে রয়েছে নাকছাবি, ছোট কানের, আংটি। অনেক ব্যবসায়ী আবার জানিয়েছেন, সামনের অগ্রহায়ণে বিয়ের মরসুম শুরু হচ্ছে। তাই নানা অফারে বিয়ের গয়নাও কিনেছেন অনেকেই। উলুবেড়িয়ার সোনা ব্যবসায়ী বুবাই দাস বলেন, ‘‘গত দু’বছরের থেকে ভাল ব্যবসা হয়েছে। তবে করোনার আগের বাজারের মতো নয়। হয়তো আগামী বছর পরিস্থিতি আরও ভাল হবে।’’ রুপোর দোকানের বিক্রিবাটাও হয়েছে ভালই। বাসনপত্র, অলঙ্কারের পাশাপাশি বেশি বিক্রি হয়েছে রুপোর টাকা। পিতলের বাসনও বিক্রির পরিমাণ ভালই।
তবে গত কয়েক বছর ধরে ধনতেরসের দিন ঝাঁটা কেনার প্রবণতা শুরু হয়েছে। এ বছর ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পান্ডুয়ার একটি দোকানের মালিক জানান, গত দু’দিনে প্রায় ২০০ ঝাঁটা বিক্রি করেছেন। হঠাৎ কেন এই ঝাঁটা কেনার হিড়িক? ব্যবসায়ীর জবাব, ‘‘ঝাঁটা দিয়ে অলক্ষ্মী বিদায়ের ইচ্ছাতেই এটার বিক্রি বাড়ছে। সোনা-রুপোর মতো অত খরচ নেই। প্রতিদিনের কাজে লাগে। আবার ধনতেরস পালনও হল। সস্তায় পুষ্টিকর বলতে যা বোঝায় আর কী!’’
(তথ্য সহায়তা: পীযূষ নন্দী, তাপস ঘোষ, সুশান্ত সরকার, দীপঙ্কর দে ও সুব্রত জানা)