—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পর্যাপ্ত মাটি মিলছে না বলে আরামবাগ মহকুমার ৪০টি ইটভাটার মধ্যে ১৯টি গত এক বছরে বন্ধ করে দিতে হয়েছে বলে মালিকদের দাবি। বাকি ২১টিও বন্ধের মুখে বলে অভিযোগ। আর এ জন্য হুগলি জেলা ভূমি দফতরের নয়া বিধিনিষেধকেই দায়ী করে তাঁরা আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিলেন। ওই দফতরের দাবি, অভিযোগ ঠিক নয়।
আরামবাগ মহকুমার বেশির ভাগ ভাটাই বিভিন্ন নদ-নদী বা খালের ধারে। দীর্ঘদিন পাড়ের জমি থেকে মাটি কেটেই ভাটাগুলি চলেছে। কিন্তু বছর দুয়েক আগে পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞার জেরে তা বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে ভাটা-মালিকেরা চাষিদের কাছ থেকে তাঁদের জমির মাটি কিনছিলেন। কিন্তু গত বছরের মাঝামাঝি জেলা ভূমি দফতর নিষেধাজ্ঞা জারি করে জানায়, খেতের মাটি সরাসরি তোলা যাবে না। সেই জমিকে পুকুর হিসাবে চরিত্র পরিবর্তন করে তবেই ৫ ফুট গভীর থেকে মাটি কাটা যাবে। এতেই আপত্তি তোলেন ভাটা-মালিকেরা।
একের পর এক ভাটা বন্ধ হওয়া শুরু হতেই মাটি তোলার আইন শিথিল করার দাবি তুলতে শুরু করেছিলেন মালিকেরা। সেই দাবি মেটেনি। রবিবার সকালে আরামবাগের বিক্রমপুরে ভাটা-মালিকদের সংগঠন বৈঠক করে আন্দোলনের ডাক দিল। সংগঠনের মহকুমা সম্পাদক তারকনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘বছর দেড়েক আগে নতুন নিয়ম জারি হওয়ার পর থেকেই সমস্যার শুরু। ভাটাগুলি বন্ধ হচ্ছে। হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ছেন। বাধ্য হয়েই শ্রমিকদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে এই আন্দোলন।’’
ভাটা-মালিকদের দাবি, জেলার অন্য জায়গার সঙ্গে আরামবাগের মাটির চরিত্র ভিন্ন। এখানে জমির উপর থেকে খুব বেশি হলে ৮ ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত ইটের উপযোগী পলি মাটি মেলে। তার নীচে গেলে এঁটেল মাটি পাওয়া যায়। তাতে ইট হয় না। ফলে, চাহিদা মিটবে না। তাই পুরনো নিয়মে চাষির জমি কেনার নিয়মটিই বলবৎ রাখার দাবি তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, ভাটাপিছু ১৫০-২০০ জন শ্রমিক থাকেন। ভাটাপিছু ৪-৫ জন করে অংশীদার থাকেন। ইতিমধ্যে মহকুমার ১৯টি ভাটা বন্ধ হওয়ায় প্রায় ৪ হাজার জন বেকার হয়েছেন। বাকি যে ২১টি চলছে, সেখানে মাত্র এক বছরের মাটি মজুত আছে।
জেলা ভূমি দফতরের এক কর্তা বলেন, “মাটি নিয়ে নানা অনিয়ম রুখতেই নতুন নিয়ম জারি হয়েছে। মাটির সমস্যা নিয়ে আরামবাগের ভাটা-মালিকদের অভিযোগ ঠিক নয়। বরং, জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে জমি কিনে তার চরিত্র পরিবর্তনের জন্য কিছু আবেদন জমা পড়েছে।’’ একইসঙ্গে তিনি জানান, নতুন নিয়মনীতি বানানোর আগেই মাটির গুণমান যথাযথ যাচাই করে দেখা গিয়েছে, কেউ জমি কিনে পুকুরে পরিবর্তন করে তা থেকে অনায়সে ৫ ফুট গভীরে ইট তৈরির উপযোগীমাটি পাবেন।
ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে চাষিরা তাঁদের জমিকে চাষযোগ্য রাখতে নানা কারণ দেখিয়ে (জমি উঁচু হয়ে থাকা, সেচের জল না থাকা, অনাবাদী ইত্যাদি) ভূমি দফতরের কাছে ভাটায় মাটি বিক্রির আবেদন করতেন। সেই মতো ভূমি দফতর মাটির মাপ করে নির্দিষ্ট টাকা (প্রাইস অব আর্থ) নিত। প্রতিটি ভাটা থেকে বছরে আড়াই-তিন লক্ষ টাকা রয়্যালটি দেওয়া হয়।