কফিনবন্দি দেহ পৌঁছল বাগনানে। ছবি: সুব্রত জানা।
উঠোনটা একচিলতে। বৃহস্পতিবার দুপুরে কাঠের কফিনটা সেখানে নামামাত্র তিল ধারণের জায়গা থাকল না। কফিনের সামনের অংশ খুলতেই দেখা গেল সাগর দে’র মুখ। গালে কয়েক দিনের না-কামানো দাড়ি। প্রচন্ড ঠান্ডায় জমে যাওয়ার চিহ্ন মুখে স্পষ্ট। দেখা গেল ‘ফ্রস্ট বাইট’-এর সাদা ক্ষতচিহ্নও। চোখ দু’টি বোজা।
সাগরের বাবা সলিলবাবু কয়েক সেকেন্ডের জন্য ছেলের কফিনের সামনে দাঁড়ালেন। চিরনিদ্রিত সন্তানের মুখ দেখার পরে মানুষটি আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারলেন না। টলে পড়ে যাওয়ার মুখে তাঁকে ধরে ফেললেন প্রতিবেশীরা। মা সোনালিদেবী কান্নায় ভেঙে পড়েন।
শুধু সাগর নন, উত্তরাখণ্ডের সুন্দরডুঙ্গা উপত্যকায় ট্রেকিংয়ে গিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মৃত বাগনানের মুরালিবাড়ের সরিৎশেখর দাস এবং চন্দ্রশেখর দাসের কফিনবন্দি দেহও এ দিন গ্রামে আনা হয়। গত সোমবার তাঁদের দেহ মেলে।
সাগরের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই সরিৎশেখর ও চন্দ্রশেখরের বাড়ি। সব জায়গাতেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। গ্রামবাসীরা সকলে তিন ট্রেকারকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। জনস্বাস্থ্য কারিগরিমন্ত্রী পুলক রায়, হাওড়ার জেলাশাসক মুক্তা আর্য, গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার সৌম্য রায় ছাড়াও জেলা পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার তরফ থেকেও দেহগুলিতে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো হয়।
পেশায় হোমিয়োপ্যাথ চিকিৎসক সাগর ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ট্রেকিং ছিল তাঁর নেশা। গত ১০ বছর ধরে তিনি ট্রেকিং করছিলেন। এ বারই ফিরলেন না। সাগরের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই সরিৎশেখর ও চন্দ্রশেখরের বাড়ি। সরিৎশেখর চন্দ্রশেখরের জ্যাঠতুতো দাদা। গানের স্কুলে
শিক্ষকতা করতেন সরিৎশেখর। চন্দ্রশেখর পারিবারিক ব্যবসা
দেখাশোনা করতেন। খালোড় পঞ্চায়েতের সদস্যও ছিলেন। সেই কারণে পঞ্চায়েত অফিসেও তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশমতো এ দিন দেহগুলি দমদম বিমানবন্দর থেকে আনা এবং বাউড়িয়া শ্মশানে দাহকার্য— সবটাই সম্পন্ন হয় মন্ত্রী পুলকবাবুর তত্বাবধানে। তিনি জানান, সবটাই হয়েছে সরকারি ব্যবস্থাপনায়।