জনশূন্য বিজেপির (ইনসেটে) অফিসে কাজ করছেন কেয়ারটেকার। নিজস্ব চিত্র
‘একা কুম্ভ’ হয়ে রয়ে গিয়েছেন শুধু কেয়ারটেকার।
উলুবেড়িয়ার মনসাতলায় বিজেপির হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের দেখা মিলছে না। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের কার্যালয়ের এমন দুর্দশা ভোটের পর থেকেই। কেয়ারটেকার তপন হাইত একাই সারাদিন খুলে বসে থাকেন। কদাচিৎ কোনও প্রয়োজনে দলীয় কর্মীরা এলেও নেতাদের দেখা না-পেয়ে ফিরে যান।
রবিবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেল কার্যালয়ের একটি ঘর খোলা। দৈনিক সংবাদপত্রগুলি মাটিতে পড়ে রয়েছে। তপনবাবু ঝাঁট দিচ্ছেন। কার্যালয়ের সামনের দিকে একাধিক জায়গায় ভাঙচুরের চিহ্ন। কার্যালয়ের মাথায় দলীয় পতাকাটি পাইপের মাথা থেকে কিছুটা নীচে গোটানো অবস্থায় রয়েছে। ভোট পরবর্তী হিংসার সময় বেশ কিছু বিজেপি কর্মী আশ্রয় নিয়েছিলেন ওই কার্যালয়ে। তাঁরাও এখন আর থাকেন না।
তপনবাবুর আক্ষেপ, ‘‘এতবড় পার্টি অফিসে একা থাকতে হয়। সবসময় ভয় হয়, যদি হামলা হয়!’’
কেন এমন হল?
জেলা (গ্রামীণ) বিজেপি সভাপতি প্রত্যুষ মণ্ডলের দাবি, ‘‘ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসে আমাদের বহু কর্মী ঘরছাড়া রয়েছেন। তাঁদের বাড়ি ফেরাতে আমরা ব্যস্ত। বিভিন্ন জায়গায় যেতে হচ্ছে। তাই জেলা পার্টি অফিসে যাওয়া যাচ্ছে না। তা ছাড়া, ওখানে নির্মাণের কাজ চলছে।’’ একই বক্তব্য দলের জেলা (গ্রামীণ) সহ-সভাপতি রমেশ সাধুখাঁরও। আর এক সহ-সভাপতি অরুণোদয় পাল চৌধুরী অবশ্য এ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। অথচ, এ দিন জেলা কমিটির একটি বৈঠক হয় পাঁচলার রঘুদেবপুরে।
ঘটনা হল, ভোটে এখানে ভরাডুবির পরেই বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দেয়। হারার কারণ নিয়ে নেতাদের মধ্যে চাপান-উতোর শুরু হয়। নেতাদের একাংশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন কর্মীরা। গত মাসের শেষ দিকে ওই কার্যালয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে হামলা হয়। সেখানে তখন দলের রাজ্য সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে বৈঠক চলছিল। নেতাদের হেনস্থা করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠে।
হামলকারীরা প্রকাশ্যে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, সন্ত্রাসের জেরে তাঁদের অনেকে ঘরছাড়া, অনেকের বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। অথচ, জেলা নেতৃত্ব ভোটের পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। ফোন করলেও তাঁরা ধরেন না। দলের জেলা কমিটি বদলের দাবি উঠেছিল।
সেই সময় বিজেপি জেলা নেতৃত্ব দাবি করেছিলেন, হামলকারীরা কেউ বিজেপির লোক নয়। বেশ কিছুদিন কেটে গেলেও তাদের নামে এখনও থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি দল।
এ দিন সকালে বাগনান বিধানসভার দুই ঘরছাড়া বিজেপি কর্মী ওই কার্যালয়ে এসেছিলেন নেতাদের খোঁজে। কারও দেখা না পেয়ে তাঁরা হতাশ হন। তাঁদেরই একজন বলেন, ‘‘ভোটে হারার পর বেশ কিছুদিন এখানে ছিলাম। কিন্তু এখানেও নিজেদের মধ্যে এত গোলমাল যে, চলে যেতে হল।’’
আর এক বিজেপি কর্মী বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়েছে যে জেলা কমিটির বৈঠক অন্যত্র করতে হচ্ছে। পাছে জেলা অফিসে বৈঠক হলে গোলমাল হয়!’’ বিজেপি নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। প্রত্যুষবাবু অবশ্য সব অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘বিজেপি কর্মী পরিচয় দিয়ে যারা দলের বদনাম করছে, তারা তৃণমূলের লোক।’’