বক্তব্য পেশ করছেন হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
অন্তর্ঘাত!
লোকসভা ভোটে হুগলিতে প্রায় ৭৬ হাজার ভোটে তৃণমূলের রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হেরেছেন বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়। রবিবার পান্ডুয়ায় দলীয় কর্মসূচিতে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্যের মাঝেই দুই নেতা-কর্মী লকেটের হারের জন্য দলের স্থানীয় মণ্ডল সভাপতিদের এবং জেলা নেতৃত্বের একাংশের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়ে সরব হয়েছিলেন। এ বার লকেট নিজেই সরাসরি অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তুললেন দলের হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তুষার মজুমদারের বিরুদ্ধে। তুষার অভিযোগ মানেননি। তবে, সামগ্রিক পরিস্থিতিতে হুগলি জুড়ে অনৈক্যের সুর পদ্ম-শিবিরের অন্দরে।
সুকান্তের কাছে দলীয় নেতা-কর্মীর ক্ষোভ নিয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য সোমবার লকেটকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘দলের মণ্ডল এবং বুথ কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ না করে জেলা সভাপতি তুষার মজুমদার তৃণমূল এবং আইপ্যাকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছিলেন।’’ লকেটের দাবি, নির্বাচন চলাকালীন তিনি দলের রাজ্য নেতৃত্বকে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলেন। নির্বাচনের শেষে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয় থেকে দলবিরোধী কাজের কথা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি। ওঁর (তুষার) দলবিরোধী কাজের তথ্যপ্রমাণ সব আমার কাছে আছে। দল ডাকলে সেগুলি তাদের দেখাব।’’
তুষারের পাল্টা প্রতিক্রিয়া, ‘‘লকেটদি এমন কথা বলতেই পারেন না।’’ একইসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘আমি আইপ্যাক বা তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখিনি। দলের পরাজয় নিয়ে মণ্ডল ও বুথ কমিটির সঙ্গে বিশ্লেষণ চলছে।’’ রাজ্যে বিজেপির প্রধান মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ বিষয়ে যা বক্তব্য রাখার, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানাবেন।’’
বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগের কথা তৃণমূল নেতৃত্বও মানছেন না। হুগলি শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারপার্সন তথা ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র বলেন, ‘‘লকেট এলাকায় কাজ করেননি, তাই হেরেছেন। ওঁকে মানুষ পছন্দ করেন না। আমাদের সংগঠন মজবুত। তা ছাড়া মানুষ আমাদের সরকারের জনমুখী প্রকল্পের জন্য ভোট দিয়েছে।’’
২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে হুগলিতে জেতেন লকেট। দু’বছর পরে বিধানসভা ভোটে লকেটকে চুঁচুড়ায় প্রার্থী করেছিল বিজেপি। লকেট জিততে পারেননি। এ বারের লোকসভায় লকেটকে যাতে ফের প্রার্থী না করা হয়, সেই দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার পড়ে। কর্মীদের কেউ কেউ প্রকাশ্যেই ক্ষোভের কথা জানান। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নেকনজরে থাকা লকেটই অবশ্য ফের এখানে প্রার্থী হন। বিজেপির নিচুতলার কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, সাংসদ হওয়ার পরে লকেটকে এলাকায় খুব একটা দেখা যায়নি। লোকসভা ভোটের আগে তিনি ‘সক্রিয়’ হয়ে ওঠেন। ওই কর্মীরা মনে করেন, এই সক্রিয়তা আগাগোড়া থাকলে তিনি জিতে যেতেন। বিভিন্ন জায়গায় দলীয় সংগঠনও কার্যত নড়বড়ে ছিল বলে বিজেপির একাংশ মানছে।
বিজেপি সূত্রে খবর, ভোটের ফল নিয়ে কাল, বুধবার কলকাতার সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে পর্যালোচনা বৈঠক রয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সেখানে থাকার কথা। এই পরিস্থিতিতে লকেটের তোলা অন্তর্ঘাতের অভিযোগ নতুন মাত্রা যোগ করল।