Hooghly

জাঙ্গিপাড়ার খুন হওয়া বালিকার বাড়িতে বিজেপি এবং সিপিএম নেতারা, তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ

শনিবার শ্রীহট্ট এলাকার একটি ঝিল থেকে উদ্ধার করা হয় এক কিশোরীর দেহ। কিশোরীর পরিবারের অভিযোগ, তাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। দশমীর রাত থেকে নিখোঁজ ছিল সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জাঙ্গিপাড়া শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২২ ১৬:১৬
Share:

মৃতার বাড়িতে বিজেপি প্রতিনিধি দল। —নিজস্ব চিত্র।

গত শনিবার শ্রীহট্ট এলাকার একটি ঝিল থেকে উদ্ধার করা হয় এক কিশোরীর দেহ। পরিবারের অভিযোগ, তাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। দশমীর রাত থেকে নিখোঁজ ছিল সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রী। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় শুরু হয়েছে এলাকায়। রবিবার কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল মৃতার বাড়িতে গিয়ে এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে পড়ে। ফিরে যায় তারা। দুপুরে বিজেপি এবং সিপিএমের প্রতিনিধি দল গেল ওই বাড়িতে। বিজেপি নেত্রী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়ালের দাবি, এমন ঘটনায় দোষীদের দ্রুত শাস্তি দিতে হবে। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ তাদের ভূমিকা পালন করেনি।

Advertisement

অন্য দিকে, গ্রামবাসীদের দাবি মেনে শনিবার সন্ধ্যার পর পুলিশ-কুকুর নিয়ে এসে তল্লাশি শুরু হয়। পুকুরে জালও ফেলা হয়। পরিবার ও পুলিশ সূত্রে খবর, ওই নাবালিকা যে দিন নিখোঁজ হয়, তার সঙ্গে একটি সাইকেল ছিল। ওই সাইকেলটি খুঁজছে পুলিশ। পাশাপাশি তদন্তে সুত্র খুঁজতেও চেষ্টা চালানো হয়। এ নিয়ে হুগলির গ্রামীণ পুলিশ সুপার আমনদীপ জানিয়েছেন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর জানা যাবে মৃত্যুর কারণ। তবে পুরো ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কেউ দোষী হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি জাঙ্গিপাড়ায় প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। সকাল ১০টা নাগাদ জেলা কংগ্রেসের একটি দল কৃষ্ণপুর গ্রামে পৌঁছয়। উদ্দেশ্য ছিল নাবালিকার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা। কিন্তু গ্রামবাসীদের বাধার মুখে পড়তে হয় কংগ্রেস প্রতিনিধি দলকে। রীতিমতো তাড়া করে গ্রামছাড়া করা হয় তাদের। প্রতিনিধি দলের সদস্য তথা উত্তরপাড়া পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর কামাখ্যানারায়ণ সিংহ বলেন, ‘‘আমরা নাবালিকার পরিবারের পাশে থাকতে চেয়েছি। কিন্তু গ্রামবাসীরা ভুল বুঝে আমাদের ঢুকতে দেয়নি।’’ এদিকে বিজেপি নেত্রী প্রিয়ঙ্কারা অভিযোগ করছেন, পুলিশ তাঁদের ওই নাবালিকার বাড়িতে যতে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু নিজেদের ভূমিকা পালন করেনি পুলিশ। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে পুলিশ কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন ধর্ষণ হয়নি। সবই সাজানো ঘটনা। এখানে পুলিশের ভূমিকাও তাই।’’

Advertisement

প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে ছিলেন পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষ ও জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। প্রথমে তাঁরা জাঙ্গিপাড়া থানায় যায়। সেখানে তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। এর পর নাবালিকার গ্রামে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘পুলিশের কাজ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া নয়। কোনও অভিযোগ এলে তার তদন্ত করা। দশমীর পরে ক’টা দিন কেটে গেল, এখনও পুলিশ বলতে পারল না ধর্ষণ হয়েছে না হয়নি! এখন অপহরণের মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানাচ্ছে পুলিশ।’’ আইনজীবী প্রিয়ঙ্কা আরও বলেন, ‘‘এটা নিছক অপহরণের মামলা নয়। যৌন হেনস্থা এবং খুনের ধারাতেও মামলা করতে হবে। তাই আমরা চাই নির্যাতিতার পরিবারের কাছে পৌঁছতে। তাঁদের বলতে চাই, আমরা পাশে আছি। আমরা মামলটা লড়ব। কিন্তু পুলিশ বলছে যেতে দেব না! কী লুকানোর চেষ্টা হচ্ছে?’’ প্রিয়ঙ্কার দাবি, তিনি নিছক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হয়ে আসেননি। এসেছেন আইনজীবী হিসাবে নির্যাতিতার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে।

অন্য দিকে, হুগলি জেলা সিপিআইএম সম্পাদক দেবব্রত ঘোষের নেতৃত্বে মহিলা সমিতির একটি প্রতিনিধি দল নাবালিকার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে জাঙ্গিপাড়া থানায় যান তাঁরা। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি জানিয়েছেন সিপিএম নেতারা। মৃত নাবালিকার জেঠু জানান, পুলিশের উপর তাঁদের আস্থা আছে। তাঁর কথায়, ‘‘এই ঘটনায় আমরা কোনও রাজনীতি চাই না।’’

জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিষ চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিরোধী দল প্রতিবাদ জানাতেই পারে। কিন্তু এই রকম একটি দুঃখজনক ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। আমরাও দলগত ভাবে পুলিশকে বলেছি ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের ধরতে। যে ভাবে নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে তাতে পরিবার এবং গ্রামের মানুষের আবেগ থাকাটাই স্বাভাবিক। আমার বিশ্বাস, পুলিশ দ্রুত অপরাধীকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে পারবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement