বেচারাম মান্না। —ফাইল চিত্র।
বিরোধিতা না হলে সিঙ্গুরে তৈরি হয়ে যেত তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প। রাজ্য পেত দ্বিতীয় গাড়ি কারখানা। তা হয়নি। ২০০৮-এ দুর্গাপুজোর ঠিক আগে সিঙ্গুর থেকে বিদায় নিয়েছিল টাটা গোষ্ঠী। এ বার ষষ্ঠীর রাতে প্রয়াত হলেন সেই স্বপ্নদ্রষ্টাও। রতন টাটার প্রয়াণে সেই সিঙ্গুর যেন বিমর্ষ!
এক সময়ের আন্দোলনকারীরা মানছেন, শিল্পক্ষেত্রে বড় ক্ষতি হয়ে গেল। তাঁদের দাবি, এখানে জমি আন্দোলন রতন টাটার বিরুদ্ধে ছিল না। ছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার এবং তাদের জমি অধিগ্রহণ নীতির বিরুদ্ধে। জমি আন্দোলনের অন্যতম মুখ তথা মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলছেন, ‘‘লড়াইটা ওঁর বিরুদ্ধে ছিল না। ছিল বামফ্রন্ট সরকারের জোর করে তিন-চার ফসলি জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে।’’ একই কথা ‘অনিচ্ছুক’ চাষি অমিয় ধাড়াও। বললেন, ‘‘উনি সিঙ্গুরে ওঁর স্বপ্নটাকে যদি বাস্তবায়ন করতে পারতেন, সত্যি আমরা আনন্দিত হতাম।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘রাজভবনের চুক্তি অনুযায়ী ৬০০ একরে শিল্প এবং ৪০০ একর জমি চাষিদের ফেরত দেওয়া হলে, হয়তো ওঁর স্বপ্ন সফল হত!’’ আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা মহাদেব দাসের কথায়, ‘‘আমরা সরাসরি রতন টাটার সঙ্গে জমি নিয়ে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম। সিপিএম সেটা
হতে দেয়নি।’’
চাষিদের যে অংশ কারখানার জন্য জমি দিয়েছিলেন, তাঁদের কথায় প্রকাশ পাচ্ছে তৃণমূলের নেতৃত্বে ওই আন্দোলন নিয়ে ক্ষোভও। তাঁদের মধ্যে অসীম জ্যোতির পরিবার ২০-২৫ বিঘা জমি দিয়েছিলেন কারখানার জন্য। তাঁর খেদ, ‘‘ওঁর মৃত্যু সংবাদে কাঁদতে ইচ্ছা করছে। জানি না ১০০ বছরেও এই জমির কিছু হবে কি না!’’ চিকিৎসক উদয়ন দাস বলেন, ‘‘একটা কারখানার ৯৫ শতাংশ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কারখানাটা চালু হতে না দিয়ে কার লাভ হল?’’
রাজ্যে পালাবদলের পরে ২০১৬-তে সুপ্রিম কোর্ট ওই জমি অধিগ্রহণকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে তা চাষিদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। ভেঙে দেওয়া হয় টাটার কারখানার কাঠামো। কিন্তু এখনও সেই ৯৯৭ একর জমির একাংশে চাষ হচ্ছে না।
সিঙ্গুর থেকে টাটাদের চলে যাওয়ার জন্য বিরোধীরা বরাবরই তৃণমূলকে দুষেছে। বিজেপির রাজ্য নেতা স্বপন পাল বলেন, ‘‘সিঙ্গুরে শিল্প হলে হুগলির যে কী উন্নতি হত, তা আজ আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা হতে দিলেন না।’’ সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং রতন টাটা অল্প দিনের ব্যবধানে চলে গেলেন। দু’জনেই চেয়েছিলেন রাজ্যের শিল্প চিত্রকে বদলাতে। সিঙ্গুর থেকে রতন টাটার চলে যাওয়াটা রাজ্যের মানুষের কাছে হতাশার।’’