পুরনো বিদ্যালয় ভবনের সামনে পড়ুয়া ও শিক্ষকরা (বাঁ দিকে)। সাদা নীলে সেজেছে ভবন (ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নির্দেশ এসেছে সু-স্বাস্থ্য়কেন্দ্রের জন্য জায়গা দিতে হবে। স্থানাভাবের কারণ দর্শিয়ে তাই পুর বিদ্যালয়ের উপরেই ব্যবস্থা করে দিতে চাইছে বৈদ্যবাটী পুরসভা। ইতিমধ্যে বিদ্যালয় ভবনটি নীল-সাদা রং করা হয়েছে। শীঘ্রই শুরু হবে দোতলা তৈরি। যে উঠোনে মিড ডে মিল খায় খুদেরা, সেখানকার ছাউনি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এমনকি বিদ্যালয়ের নামও মুছে দিয়ে টাঙানো হয়েছে সু-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফ্লেক্স।
বৈদ্যবাটীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের চক পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমন হাল নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের আশঙ্কা, এ বার ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়া হবে বিদ্যালয়টি। বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসকের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও জানিয়েছেন তাঁরা।
পুরপ্রধান পিন্টু মাহাতোর অবশ্য দাবি, ‘‘বিদ্যালয়টি বন্ধ করার প্রশ্ন নেই। নীচে যেমন পঠনপাঠন চলছে, চলবে। উপরের অংশে পৃথক ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর ভবনের ছবি সরকারি পোর্টালে তোলা হয়ে গেলেই ফের বিদ্যালয়ের নাম লিখে দেওয়া হবে।’’
কিন্তু যদি বিদ্যালয়ের নাম থাকে, সেই ছবি পোর্টালে দিলে অসুবিধা কোথায়? উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমা ভুঁইয়ার। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনে অবাক লাগছে। খোঁজ নেব।’’
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পে বৈদ্যবাটী পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে একটি সু-স্বাস্থ্যকেন্দ্র করার নির্দেশ এসেছে। স্থানীয় নির্দল পুর-প্রতিনিধি দেবরাজ দত্ত বলেন, ‘‘এলাকার মানুষের জন্যই ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র করা হচ্ছে। তবে জায়গা মেলেনি। তাই ওই বিদ্যালয় ভবনে সেটি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। দোতলায় ওঠার জন্য বাইরে দিয়ে সিঁড়ির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর সঙ্গে বিদ্যালয়ের কোনও যোগ থাকবে না।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৯২৫ থেকে পথচলা শুরু এই পুর-বিদ্যালয়ের। শিশুশ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন চলে। আগে ২৫০-৩০০ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করত। বর্তমানে পড়ুয়া নেমেছে ১০৩-এ। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই পড়ুয়া কমাকেই হাতিয়ার করে সেখানে সু-স্বাস্থ্যকেন্দ্র করতে চাইছে পুরসভা। শিশুশ্রেণির এক ছাত্রের বাবা বলেন, ‘‘আসলে এটা বিদ্যালয়টিকে বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা। এই ভবনের উপরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চললে তো সেটা পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। জেলাশাসকের কাছে আমরা এর বিহিত চাইব।’’ প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রীর মায়ের কথায়, ‘‘নিশ্চয়ই এলাকায় একটা সু-স্বাস্থ্যকেন্দ্র দরকার। তা বলে সেটা এখানেই করতে হবে?’’
পুরসভার হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় পুর-প্রতিনিধি মুখে বলেছিলেন। তবে পুরসভা থেকে লিখিত কিছু জানানো হয়নি। এখন বর্ষাকাল। ছাউনি খুলে দেওয়ারফলে পড়ুয়াদের মিল খেতে বসতে অসুবিধা হবে।’’