Howrah

মসজিদ সাফ রাখতেই হবে, দায়িত্ব কাঁধে নিলেন আরতি

Advertisement

পীযূষ নন্দী

গোঘাট শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২১ ০৮:৫০
Share:

সম্প্রীতি: প্রাচীন মসজিদকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন আরতি প্রামাণিক। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

হোক তা ভগ্ন, কিন্তু সাফসুতরো।

Advertisement

২৭ বছর ধরে বন-বাদাড় সাফ করে, সাপ-খোপ দূর করে, নিয়মিত পরিষ্কার করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে এলাকার ‘জামি মসজিদে’ ফিরিয়েছিলেন গোঘাটের বাজুয়া গ্রামের দিনমজুর রামানন্দ প্রামাণিক। হিন্দুরাও সেখানে পুজো দেন। গত পৌষ মাসে রামানন্দের মৃত্যুর পরে মসজিদ সাফসুতরো করার কাজ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন স্ত্রী আরতিদেবী। প্রাত্যহিক ওই কাজে কোনও ছেদ পড়তে দেননি। যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকেই নিত্যদিন সাফসুতরো করে চলেছেন বছর আটান্নর ওই প্রৌঢ়া!

মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণে একটি হিন্দু পরিবারের এমন উদ্যোগে গর্বিত এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। ইসমাইল আলি নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘সাম্প্রদায়িক বিভেদের কথা আমরা শুনি বটে। আমাদের গ্রামে কিন্তু তেমন কিছুই ভেদ নেই। মন্দির-মসজিদ তো প্রাথর্নার জায়গা। সেখানে সকলে এক।’’

Advertisement

আরতিদেবী বলছেন, ‘‘স্বামীর কাজটাই করছি। সাপের বাসা যাতে না হয়, ঝোপ হলে যতটা পারি নিজে কাটছি। না হলে দেওর বা ছেলেদের ডেকে কাটাচ্ছি। দু’বেলা ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার রাখছি। সন্ধ্যায় ধূপ জালিয়ে যাচ্ছি। স্বামী চাইতেন, মসজিদটা সরকার সংস্কার করুক। কিন্তু কিছু তো হল না।’’

অনাদরে পড়ে থাকা ওই মসজিদ ‘পুরাকীর্তি’। ৮০-র দশকের গোড়ায় মসজিদটি রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ খাতায়-কলেমে অধিগ্রহণ করে। বোর্ড বসানো হয়। তাতে মসজিদটিকে ‘পুরাকীর্তি’ হিসেবেই দেখানো হয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তারপরে নামমাত্র দু’টি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। তারপরে আর সংরক্ষণের কোনও কাজ হয়নি। দেওয়াল খসে পড়ছে। কোনও দিন কোনও সরকারি আধিকারিকদের দেখা মেলেনি।

ইতিহাস বলছে, বাংলার সুলতান হুসেন শাহের ছেলে নুসরত শাহের রাজত্বকালে ১৫৩১ থেকে ১৫৩২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মসজিদটি নির্মাণ হয়। বাজুয়ার রাজাকে পরাজিত করে ১০ একর এলাকা জুড়ে মসজিদ গড়েন নুসরত।

অতীতে মসজিদের পাশেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসতি ছিল। বর্তমানে তাঁরা সরে গিয়েছেন কিছুটা দূরের মদিনা, ভাদুর এবং তাহেরপুর গ্রামে। মদিনার শেখ ফরজান, তাহেরপুরের রমজান মুন্সিরা জানান, আগে জঙ্গল এবং সাপ খোপের ভয়ে মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছনো যেত না। পথ সহজ করে দেন রামানন্দ।

রামানন্দ ধান শুকোতে দিতেন ওই মসজিদের কাছেই। সেখানে সাপের উৎপাত হওয়ায় মসজিদের বন পরিষ্কার করতে শুরু করেন তিনি। তারপরই যেন হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়েরই আরাধনাস্থল হয়ে ওঠে ওই মসজিদ। প্রতি বৃহস্পতিবার দুই সম্প্রদায়ের মানুষই সেখানে পুজো দেন। মসজিদের কাছাকাছি রাস্তা দিয়ে কোনও শোভাযাত্রা গেলে ব্যান্ড বা ঢাক বাজানো বন্ধ রাখা হয়।

আরতিদেবীর কাজের প্রশংসা করেছেন গোঘাট-১ ব্লকের বিডিও সুরশ্রী পাল। তিনি বলেন, “ওই পুরাকীর্তির বিষয়টা আমার নজরে আসেনি। খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট দফতরকে সংস্কারের জন্য তদ্বির করা হবে। এলাকা পরিপাটি রাখতে ওই প্রৌঢ়ার প্রচেষ্টা প্রশংসা করার মতো।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement