— ফাইল চিত্র।
‘পাস’ কই?
নানা প্রয়োজনে বাইক, স্কুটি বা গাড়ি নিয়ে বেরোনো জগদ্ধাত্রীর শহরে পঞ্চমী থেকেই পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের এই প্রশ্নে বহু শহরবাসীকেই থামতে হল। কোথাও অনুনয়-বিনয়ে কাজ হল, কোথাও হল না।
গত কয়েক বছরের মতো এ বারও চন্দননগরে উৎসব শুরু হতেই পুলিশের ‘এন্ট্রি পাস’ না পেয়ে শহরবাসীর অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ শুরু করেছেন। এ দিন বিকেল থেকেই শহরে সাধারণ যানবাহনের ‘নো এন্ট্রি’ ঘোষণা করেছে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট। ফলে, কলকাতা বা অন্য দূরবর্তী এলাকা থেকে যাঁরা গাড়িতে আসবেন, সকালের মধ্যে না এলে তাঁদের দুর্ভোগ থেকে রেহাই মিলবে না বলে জানিয়েছেন শহরবাসীর অনেকেই। আবেদন মতো পাস না পেয়ে শনিবার থেকেই সাত দিনের জন্য চুঁচুড়া আদালতের আইনজীবীরা বিচার ব্যবস্থার কাজে যুক্ত থাকবেন না বলে জানিয়েছেন। আইনজীবীদের দাবি, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবশালীদের হাতে অপ্রয়োজনীয় ভাবে ‘পাস’ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজন থাকা মানুষেরা তা পাননি।
চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তার দাবি, ‘‘পাস সীমিত। সকলকে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে, আবেদনে প্রয়োজনের গুরুত্ব বুঝে অনেককেই পাস দেওয়া হয়েছে।’’ ‘পাস’ নিয়ে স্বজনপোষণের অভিযোগ তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন।
পুলিশকর্তা ওই দাবি করলেও অনেকেরই প্রশ্ন, প্রয়োজনের গুরুত্ব কি সব সময় সঠিক ভাবে যাচাই হচ্ছে? হঠাৎ করে কারও গাড়ি নিয়ে বেরোনোর প্রয়োজন হলে তাঁরা যাবেন কোথায়?
‘পাস’ নিয়ে প্রতিমা দর্শনের নিয়ম নেই। যাতায়াতের জন্য সব ধরনের অনুমতিপত্রেই তা স্পষ্ট ভাবে লেখা রয়েছে। তবে, স্থানীয়দের অভিযোগ, অনেকেই গাড়িতে ‘পাস’ লাগিয়ে ঠাকুর দেখতে বের হন। সে সব ক্ষেত্রে কী করে প্রয়োজনের গুরুত্ব যাচাই হচ্ছে?
ওই পুলিশকর্তা অবশ্য এই অভিযোগ কিছুটা হলেও মানছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ রকম হলে গাড়ি থেকে পাস খুলে নেওয়া হয়। তবে উৎসবের মরসুমে আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় এই প্রবণতা অনেকেরই থেকে যায়।’’
পুজোর আগে ‘পাস’ বিলির জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয় ঠিকই। কিন্তু সে ব্যাপারে সে ভাবে প্রচার করা হয় না বলে অনেকের অভিযোগ। ফলে, অনেকে জানতেই পারেন না, কখন কবে আবেদন করতে হবে। তা ছাড়া, পাস পেয়েছেন, এমন কয়েকজন জানান, এর জন্য দীর্ঘ ভোগান্তি হয়।
আগে ‘নো এন্ট্রি’ থাকায় কাজ শেষে নিজের শহরে ঢুকতে সমস্যায় পড়েছেন, এ রকম লোকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ভদ্রেশ্বর সারদা পল্লির বাসিন্দা সুব্রত নন্দী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী। নিজের গাড়ি নিয়ে প্রতিদিন কলকাতার সেক্টর ফাইভে যাতায়াত করেন। তিনি জানান, গত বছর ফেরার সময় দিল্লি রোডের বিঘাটি মোড়ে তাঁর গাড়ি আটকায় পুলিশ। কর্তব্যরত পুলিশকর্মী স্টেশন পার করে কোনও ভাবেই জিটি রোডের দিকে যাওয়া যাবে না বলে তাঁকে জানিয়ে দেন। তিনি ঠিকানার প্রমাণপত্র দেখিয়ে ওই কর্মীকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, সারদা পল্লি স্টেশনের ও পাড়ে নয়। কিন্তু পুলিশ শোনেনি। অগত্যা সেই রাত তাঁকে গাড়িতেই কাটাতে হয়।
সরিষাপাড়ার বাসিন্দা পলাশ কর্মকারের বাড়ির কাছেই সোনার দোকান রয়েছে। ব্যবসার কাজে মাঝেমধ্যেই নৈহাটি যেতে হয়। গত বছর পুজোতে নৈহাটি থেকে ফেরার পথে চুঁচুড়ার তোলাফটকে তাঁর বাইক আটকায় পুলিশ। চেনা পুলিশকর্মী থাকায় সেখানে রেহাই মিললেও তালডাঙায় এসে ফের পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। তাঁর অভিযোগ, ঘণ্টাখানেক হেনস্থার পরে নিজের শহরে ঢোকার অনুমতি মেলে।
এমন উদাহরণ আরও আছে। পুলিশের একাংশ মানছে, উৎসবের সময়ে বাইরে থেকেও বহু পুলিশকর্মী আসেন। তাঁরা শহরের মানচিত্র পুরোপুরি জানেন না। সে ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হয়।