এখানেই ছিল স্কুলের পুরনো ভবনটি। নিজস্ব চিত্র।
বেশ কিছুদিন আগে ভেঙে ফেলা হয় উলুবেড়িয়ার রাজখোলা সাউথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবন। সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ভয় দেখিয়ে সেই ভবনের লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ইট, দরজা-জানালা এবং ছাউনির টিন বেআইনি ভাবে নিলামের নামে মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের দুই পঞ্চায়েত সদস্য এবং তাঁদের লোকজনের বিরুদ্ধে।
স্কুলটি উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের তেহট্ট-কাঁটাবেড়িয়া-২ পঞ্চায়েতে। নাম রাজখোলা সাউথ প্রাথমিক বিদ্যালয়। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে হাওড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। সংসদের সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, "আমরা প্রথম দফায় স্থানীয় ভাবে স্কুল পরিদর্শককে দিয়ে তদন্ত করিয়েছি। তাতে অভিযোগের সত্যতা প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এরপরে সংসদ থেকে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি যাবে তদন্ত করতে। দোষীদের ছাড়া হবে না।’’
যে দুই পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের একজন হাসিবুল রহমানের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। অন্যজন মহিলা। তাঁর স্বামী শেখ আওয়ালের দাবি, ‘‘কাজে কোনও বেনিয়ম হয়নি।’’ একই দাবি করেছেন পঞ্চায়েত প্রধান আরসিদা বেগমের স্বামী বাপি শাহও।
ওই পঞ্চায়েতটি পড়ে উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্রের তৃণমূল সভাপতি বিমল দাস জানিয়েছেন, অভিযোগ সত্য হলে যাঁরা এতে জড়িত, তাঁদের শাস্তি হওয়া দরকার। তাঁরা দলের হলেও দল তাঁদের পাশে দাঁড়াবে না।
গ্রামবাসীদের দানের জমিতে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬২ সালে। পরে স্কুলভবন জীর্ণ হয়ে পড়ায় পাশেই নতুন একটি ভবন বানিয়ে দেয় সরকার। সেখানে স্কুলটি উঠে আসে। পুরনো ভবনে চালু হয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। গত ২৫ জুন স্কুলকে চিঠি দিয়ে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা জানান, পুরনো স্কুলভবনটি এতটাই জীর্ণ হয়ে পড়েছে, সেটি যেন ভেঙে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়। গত ৪ জুলাই স্কুলের পক্ষ থেকে জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদকে চিঠি দিয়ে ওই ভবন ভাঙার অনুমতি চাওয়া হয়। ১৯ জুলাই সংসদ অনুমতি দেয়। একইসঙ্গে সংসদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবন ভাঙার পরে ইট, টিন, দরজা-জানালা নিলাম করে বিক্রি করতে হবে। সেই টাকা জমা দিতে হবে সংসদের অ্যাকাউন্টে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাড়িটি ভাঙার পরে বাতিল ইট-কাঠ বিক্রি করার জন্য কোনও নিলাম হয়নি। স্থানীয় দুই পঞ্চায়েত সদস্য এবং তাঁদের সাঙ্গোপাঙ্গরা লোকদেখানো ‘টেন্ডার’ করে। তিন ভুতুড়ে ঠিকাদারকে খাতায়-কলমে তাতে শামিল করানো হয়। তাঁদের দরপত্র ছিল যথাক্রমে ২০০০, ২৫০০ এবং ৫০০০ টাকা। শেষ অবধি যে ঠিকাদারের নাম করে পাঁচ হাজার টাকা দর ফেলা হয়েছিল, তাঁকেই ২০ হাজার ইট, চারটি দরজা, ১২টি জানালা, ১৭৮৬ বর্গফুট ছাউনির টিন বিক্রি করে দেওয়া হয়।
গ্রামবাসীদের দাবি, সব মিলিয়ে ওই বাতিল জিনিসপত্রের দাম লক্ষাধিক টাকা। যে ঠিকাদারের নামে বাতিল জিনিসগুলি কেনা হয়, সেই নামে কেউ নেই। পঞ্চায়েত সদস্যেরাই যোগসাজশ করে একজনকে শিখণ্ডী দাঁড় করিয়ে জলের দরে বাতিল জিনিসগুলি কিনেছেন পরে বিক্রি করে বাড়তি লাভের আশায়।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইট-কাঠ নিলামের পাঁচ হাজার টাকা জেলা প্রাথমিক সংসদের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়েছে। তাঁকে ভয় দেখানোর অভিযোগ নিয়ে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দিলীপ মণ্ডল কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘আসলে এইসব নিলামের ব্যাপারে আমার কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই পঞ্চায়েতের উপরেই ছেড়ে দিই।’’
সংসদ সভাপতি বলেন, ‘‘ওই বাতিল জিনিসপত্রের বিক্রি প্রক্রিয়ায় পঞ্চায়েতের থাকার কথা নয়। স্কুলকেই এইসব জিনিস বিক্রি করতে বলা হয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রাথমিক তদন্তের সময়ে জানিয়েছেন, তাঁকে চাপ দিয়ে এই কাজটি করিয়ে নেওয়া হয়। এ কথা তিনি আগেই আমাদের জানাতে পারতেন।’’