অভিযুক্ত কাশেমের দোকান ভাঙচুর করেছে এলাকাবাসী। নিহত রিয়াজুল হক (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র।
রাস্তার কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। সেই ‘অপরাধে’ তৃণমূল সমর্থক এক প্রৌঢ়কে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল দলেরই তিন কর্মীর বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হুগলির চণ্ডীতলার ভগবতীপুরের ওই ঘটনায় নিহতের নাম রিয়াজুল হক (৫০)। তাঁর বাড়ি ভগবতীপুর পঞ্চায়েতের জলামাদুল মধ্যপাড়ায়। পাশের পাড়া বালিয়াগড়ের বাসিন্দা আব্দুল সুকুর, শেখ কাশেম ও ফারুক আলি মণ্ডলের বিরুদ্ধে চণ্ডীতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহতের দাদা মফিজুল রহমান। কাশেম ও সুকুর দুই ভাই। ঘটনার পরেই কাশেমের চায়ের দোকানে ভাঙচুর করেছিল জনতা। ময়নাতদন্তের পরে শুক্রবার বিকেলে রিয়াজুলের দেহ গ্রামে পৌঁছলে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে দেহ রেখে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসী। পুলিশ পরিস্থিতি সামলায়।
শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করে তদন্ত চলছে। অভিযুক্তেরা পলাতক। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’
দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী প্রৌঢ়কে খুনের অভিযোগ ওঠায় তৃণমূল নেতৃত্ব অস্বস্তিতে পড়েছেন। তবে, শ্রীরামপুর-হুগলি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুলিশকে বলা হয়েছে কোনও রং না দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।’’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রেজাউল হাওড়ার ডোমজুড় বাস স্ট্যান্ড এলাকায় এতটি সোনার দোকানের কারিগর ছিলেন। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার কাজ শেষে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন। বালিয়াগড়ে কাশেমের চায়ের দোকান আছে। সুকুর, ফারুক-সহ আরও কয়েক জন ওই দোকানে ছিল। অভিযোগ, সেখানে রিয়াজুলের পথ আটকায় সুকুর। রাস্তার কাজের মান নিয়ে কেন রিয়াজুল প্রশ্ন তুলেছেন, তার জবাবদিহি চায়। দু’জনের বচসা বাধে। এর পরেই সুকুর, কাশেম ও ফারুক মিলে রিয়াজুলকে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। কিল-চড়-ঘুষিতে তিনি লুটিয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ততক্ষণে অভিযুক্তেরা সরে পড়েছে।
ওই খবর চাউর হতেই শোরগোল পড়ে। স্থানীয় লোকজন কাশেমের দোকানে ভাঙচুর চালান। তাঁদের অভিযোগ, চায়ের দোকানের আড়ালে মদ-জুয়া-সাট্টার ঠেক চলত। নিহতের বড় মেয়ে আফসানা খাতুন বলেন, ‘‘আব্বা রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ বাড়িতে ফোন করে বলে, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। শুনে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, সত্যি সত্যিই আব্বাকে ওরা মেরে দিয়েছে। রাস্তা নিয়ে কথা বলার জন্যই বাবার এই পরিণতি হল। ওদের ফাঁসি চাই।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, রিয়াজুলের বাড়ির সামনে দিয়ে ভগবতীপুর পঞ্চায়েতের তরফে এক কিলোমিটার দীর্ঘ ঢালাই রাস্তা তৈরি হচ্ছে। কাজের মান নিয়ে দিন কয়েক আগে রিয়াজুল প্রতিবাদ করেন। অভিযোগ, রাস্তাটি ৫ ইঞ্চি পুরু ঢালাই হওয়ার কথা। কিন্তু কোথাও তিন, কোথাও দু’ইঞ্চি ঢালাই করা হচ্ছে। তারই প্রতিবাদ করেছিলেন ওই প্রৌঢ়।
যে পঞ্চায়েত সদস্যের তত্বাবধানে ওই রাস্তার কাজ হচ্ছে, সুকুররা তাঁর অনুগামী বলে এলাকাবাসীর দাবি। তাঁরা মনে করছেন, রাস্তার কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ওই পঞ্চায়েত সদস্যের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এই আশঙ্কাতেই সুকুররা ওই কাণ্ড করে।
কাশেম-সুকুরের মা রাকিয়া বেগম বলেন, ‘‘কোথা থেকে কী হল, বুঝতে পারছি না। কাল চায়ের দোকানে একটা অশান্তি হয়েছে। তবে কী নিয়ে, জানি না। ছেলেরা ভোটের সময় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘোরে। কোন পার্টি করে, জানি না।’’