উপপ্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দলের
Murder

প্রতিবাদীকে পিটিয়ে খুনে গ্রেফতার তিন

মূল অভিযুক্ত শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, তৃণমূলের শেখ সাদ্দাম হোসেনকে ধরা যায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

পুরশুড়া শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২১ ০৬:৪২
Share:

খুনের জেরে উত্তেজনা পুরশুড়ার সাঁওতা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।

নেতার দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় শনিবার সকালে পুরশুড়ার সাঁওতা গ্রামের শ্রমিক শেখ হাসিবুলকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগে রাতেই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে, মূল অভিযুক্ত শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, তৃণমূলের শেখ সাদ্দাম হোসেনকে ধরা যায়নি।

Advertisement

নিহতের স্ত্রী নুর নেহার বেগমের দাবি, “দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় স্বামীকে বহু লোকের চোখের সামনে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। দোষীদের কঠিন সাজা হোক।”

পুলিশ জানায়, সাদ্দাম পলাতক। ধৃতদের নাম শেখ সাইফুদ্দিন, শেখ তৌফিক এবং শেখ সালামত। রবিবার তাদের আরামবাগ আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাদের চার দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। এসডিপিও (আরামবাগ) অভিষেক মণ্ডল বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল ছিল। কিসের গোলমাল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”

Advertisement

উপপ্রধানের নেতৃত্বে ১০০ দিনের কাজে প্রকল্পে ভুয়ো মাস্টার রোল বানিয়ে সরকারি টাকা নয়ছয় করা হচ্ছে বলে সরব হয়েছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। শনিবার সকাল ৬টা নাগাদ গ্রাম থেকে কিছুটা তফাতে ১০০ দিনের প্রকল্পে একটি খাল সংস্কারের কাজ শুরু হয়। সেখানে চড়াও হয়ে শেখ মিরহান, তাঁর মা মুনা বিবি-সহ কয়েকজনকে সাদ্দাম ও তাঁর লোকজন মারধর করে বলে অভিযোগ। মূল প্রতিবাদী শেখ হাসিবুল মাঠে গরু বেঁধে সেই কাজের ক্ষেত্রে যাওয়ার পথে তাঁকেও লাঠি, রড এবং লোহার আঁকশি দিয়ে পেটানো হয় বলে অভিযোগ। দাদাকে মারতে দেখে সেখানে হাসিবুলের ভাই শেখ কিতাবুল বাধা দিতে যান। তিনিও প্রহৃত হন। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে আহত ৬ জনকে উদ্ধার করে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসিবুলের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে প্রথমে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, তারপরে
একটি নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করানো হয়। সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। কিতাবুলকেও রাতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করানো হয়েছে।

তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরেই ১০০ দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর বিলি, ‘নির্মল বাংলা’ প্রকল্পে শৌচাগার নির্মাণ ইত্যাদি সরকারি প্রকল্পের উপভোক্তাদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠছিল উপপ্রধান ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে। গ্রামবাসীরা আতঙ্কে বিশেষ প্রতিবাদ করতেন না। সম্প্রতি হাসিবুলের কাছ থেকে তাঁদের গরুর ব্যবসার জন্য উপপ্রধান ২০ হাজার টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ। হাসিবুল বিরোধিতা করেন। কোনও অজুহাতে কেউ যাতে উপপ্রধানকে টাকা না দেন, তা নিয়ে গ্রামবাসীদের পরামর্শও দিচ্ছিলেন তিনি। তার জেরেই তাঁকে পিটিয়ে খুন করা হল বলে দলেরই কেউ কেউ মনে করছেন।

নিহত হাসিবুল।

ব্লক তৃণমূল সভাপতি কিঙ্কর মাইতি বলেন, “স্থানীয় স্তরে উপপ্রধানকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি উঠছে। বিষয়টা জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি।” দলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব হাসিবুলের মৃত্যুর খবর পেয়ে শনিবার রাতেই আরামবাগে এসে হতাহতদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, “অত্যন্ত অন্যায় কাজ করা হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। দলেও ব্যবস্থা নেওয়ার যে পদ্ধতি আছে, সেই পদক্ষেপ
করা হয়েছে।”

অভিযুক্ত উপপ্রধান শনিবার দাবি করেছিলেন, মারধরের ঘটনায় তাঁকে মিথ্যা জড়ানো হয়েছে। তোলা আদায় এবং দুর্নীতির অভিযোগও মানেননি। রবিবার তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। সারাদিন ফোন বন্ধ ছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement