আরামবাগ স্টেশন। নিজস্ব চিত্র
ট্রেন চলছে ১২ বছর। তবে, আরামবাগ স্টেশনের পরিকাঠামো তিমিরেই! না আছে জুৎসই শেড (ছাউনি), না ‘ব্যবহারযোগ্য’ শৌচাগার! ব্যস্ত এই স্টেশনের পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবিতে বছর দেড়েক আগে পূর্ব রেলকে চিঠি দিয়েছিল নাগরকি সংগঠন অল বেঙ্গল সিটিজেন্স ফোরাম। সংগঠনের দাবি, সমস্যার সমাধান হয়নি। যাত্রী দুর্ভোগ নিয়ে ফের তারা রেলের দরজায় কড়া নাড়ল। বুধবার স্মারকলিপি দেওয়া হল পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্রকে। ই-মেল করে প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যানকে।
সমস্যার কথা স্বীকার করে রেল সূত্রের দাবি, দুর্ভোগ ঘুচতে চলেছে। যাত্রীদের সুবিধার্থে ছাউনি বাড়ানো হচ্ছে। সংস্কার করা হবে শৌচাগার। প্ল্যাটফর্মে ঝকঝকে টাইলস বসছে। তা শেষ হলেই শেড এবং শৌচাগারের কাজে হাত পড়বে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম চলে এসেছে। এই স্টেশনে তিনটি প্ল্যাটফর্ম আছে।
হুগলির আরামবাগ মহকুমা ছাড়াও এই রেলপথ ব্যবহার করেন বর্ধমানের দক্ষিণ অংশ, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। বহু মানুষ আরামবাগ স্টেশন হয়ে হাওড়া, কলকাতা বা অন্যত্র যান। ২০১৬ সালে এই রেলপথ সম্প্রসারিত হয়েছে গোঘাট পর্যন্ত। স্মারকলিপিতে স্টেশনের অব্যবস্থা নিয়ে ফোরামের অভিযোগ, প্ল্যাটফর্মে শেড রয়েছে নামমাত্র। ১২ কামরার ট্রেনের ১১টিই শেডহীন ফাঁকা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ায়। প্রখর রোদে, বৃষ্টিতে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ভিজে-পুড়েই। বৃষ্টিতে ট্রেন থেকে নেমে মাথা গোঁজার উপায় থাকে না।
প্ল্যাটফর্মের শৌচাগার ভাঙাচোরা। তা ব্যবহারের অযোগ্য বলে যাত্রীদের অভিযোগ। ফলে, তাঁরা মুশকিলে পড়েন। বিশেষত বয়স্ক এবং মহিলাদের প্রাণান্তকর অবস্থা হয়। ফোরামের সভাপতি শৈলেন পর্বত বলেন, ‘‘হাওড়া থেকে আরামবাগ দু’ঘণ্টারও বেশি সময়ের যাত্রা। আরামবাগে নেমে অনেকেরই শৌচাগারে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। তাঁরা খুবই সমস্যায় পড়েন। বর্তমানে বহু মানুষের ব্লাড সুগার। শৌচাগার না-থাকলে তাঁদের কী অবস্থা হয়, ভাবুন! পানীয় জলেরও বন্দোবস্ত যথাযথ নেই।’’
স্টেশন কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, সমস্যা দ্রুত মিটতে চলেছে। স্টেশন ম্যানেজার দীপক চৌধুরী বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে আরামবাগ জংশন স্টেশন হবে। সেই মতো আরও যাত্রী শেড নির্মাণ-সহ কিছু পরিকল্পনা পাঠিয়েছিলাম। তার অনুমোদন মিলেছে। কাজও শুরু হয়েছে।’’ তিনি জানান, তিনটি প্ল্যাটফর্ম মিলিয়ে অতিরিক্ত চারটি শেড হচ্ছে। শৌচাগারের আমূল সংস্কার হবে। প্ল্যাটফর্মে, শৌচাগারে টাইলস বসবে। আরামবাগের নিত্যযাত্রী সংগঠনের কর্মকর্তা রূপক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমস্যা রয়েছে। তবে তার অনেকটাই মিটতে চলেছে। আশা করব, দ্রুত কাজ হবে।’’
জংশন প্রসঙ্গে স্টেশন ম্যানেজারের বক্তব্য, তিনটি রেলপথের সংযোগ হবে এখানে। বিষ্ণুপুর ছাড়াও মশাগ্রাম এবং পূর্ব পাঁশকুড়া মিশবে। মাপজোক হয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যতে জংশনের জন্য ডরমিটরি, ভিআইপি রুম এবং প্রথম শ্রেণির প্রতীক্ষালয় নির্মাণের আবেদন জানানো হয়েছে।