গত বছর নষ্ট হয়ে যাওয়া আলু দেখাচ্ছেন চাষি। সিঙ্গুরের একটি জমিতে। ফাইল চিত্র।
ক্ষতিপূরণে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হুগলির আলুচাষিদের একাংশ। উপগ্রহ চিত্রের নিরিখে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তাঁরা। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। চাষিদের এই ক্ষোভকে রাজনীতির পুঁজি করতে কোমর কষছে সিপিএম।
গত বছর ১৩ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন হুগলির পুরশুড়ার কেলেপাড়া গ্রামের বাপ্পাদিত্য ধোলে। অকালবৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে ফসল। বিমার আওতায় থাকা ওই চাষির দাবি, ‘‘আমার মতো অনেকে এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি। ক্ষোভ ছড়াচ্ছে। সমবায়ে গিয়েছিলাম। বলা হল, কাগজপত্র বিমা সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। টাকা আসেনি। বিঘা প্রতি ৯০-১০০ বস্তা আলু হওয়ার কথা। মিলেছে বিঘায় গড়ে ৪৫ বস্তা।’’ একই দাবি তাঁর মতো অনেক চাষির।
চাষিদের একাংশের অভিযোগ, ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে অসঙ্গতি রয়েছে। আলু চাষ খুব একটা বেশি হয় না, এমন অনেক এলাকায় চাষিরা বেশি টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। অথচ, যেখানে ক্ষতির পরিমাণ বেশি, সেখানে কম ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন চাষিরা। পূর্ব বর্ধমানে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত সমস্যা মিটলেও হুগলিতে তা থেকেই গিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ায় নড়ে বসেছে প্রশাসন। কৃষি দফতরের তরফে সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, শুধু উপগ্রহ থেকে পাওয়া চিত্রের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা চলবে না। এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতির বহর দেখতে হবে। যদিও, বাপ্পাদিত্যের মতো অনেকেরই অভিযোগ, পরিদর্শনে আসেননি কেউ।
সিপিএমের কৃষক সংগঠন কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদারের অভিযোগ, ‘‘বহু আলুচাষি ক্ষতিপূরণ পাননি। ধাপ্পা দেওয়া হয়েছে তাঁদের। তথ্য সংগ্রহ করছি। তার পরে, ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবিতে আন্দোলন হবে।’’ চাষিদের ক্ষোভের আঁচ পেয়েছে শাসক দলও। তৃণমূলের কৃষক ও খেতমজুর সংগঠনের দায়িত্বে থাকা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু জানান, লিখিত ভাবে কেউ না জানালেও ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক সময় বিমা সংস্থাগুলি অসুবিধার সৃষ্টি করে। কৃষি দফতর নিশ্চয়ই বিষয়টি দেখবে। যাঁরা বিমা করেছেন, তাঁদের অবশ্যই ন্যায্য পাওনা পাওয়া উচিত।’’
ফলন কম হওয়ায় মাথায় হাত চাষির। নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা তথা দুর্গাপুর পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক প্রদীপ মজুমদারের দাবি, ‘‘এখন তিন মাসের মধ্যে চাষিরা ক্ষতিপূরণ পান। আগে কত ক্ষতি হয়েছে, কে কত ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, তা জানাই যেত না। বিমার আওতায় থাকা কৃষকের সংখ্যা বহু গুণ বাড়ায় এখন ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। যাঁরা সমস্যায় পড়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছে বিমা সংস্থাকে। তাঁরা সন্তুষ্ট হলেই আমরা সন্তুষ্ট। জেলা প্রশাসনও বিষয়টি দেখছে। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছে বিমা সংস্থাকে।’’
সোমবার সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থা দাবি করেছে, ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু হয়েছে দুই জেলায়। সংস্থার রিজিয়োনাল ম্যানেজার সন্তু দাসের কথায়, ‘‘ক্ষতিপূরণের দাবির (ক্লেম) পরিমাণ হুগলিতে ১১৬ কোটি টাকা এবং পূর্ব বর্ধমানে ৬৯ কোটি টাকা। শনিবার কিছু টাকা পাঠানো হয়েছে। এ দিনও কিছু টাকা গিয়েছে। আবার যাবে।’’
ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাবে সন্তুবাবু বলেন, ‘‘সরকারি গাইডলাইন মেনেই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। এ বার ‘টেকনিক্যাল’ কিছু সমস্যা হয়েছিল। শুধু উপগ্রহ চিত্রের উপরে নির্ভর করে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ঠিক হয়নি। জমি পরিদর্শনও হয়েছে।’’ যদিও বাপ্পাদিত্যর মতো অনেক চাষির অভিযোগ, এখনও তাঁদের এলাকায় দেখা যায়নি কোনও আধিকারিককে।