ফাইল চিত্র।
বেশ কিছু দিন বন্ধ থাকার পরে বিভিন্ন জুটমিল সম্প্রতি খুলেছে। কিন্তু, শ্রমিকদের একাংশ আর কাজে ফিরবেন কি না, তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন মিলকর্তারা। কারণ, অনেকেই শ্রমিক মহল্লা ছেড়েছেন।
করোনা-পর্বে দীর্ঘ সময় বন্ধ থেকেছে জুটমিল। রোজগার হারিয়ে দিশেহারা হয়েছেন শ্রমিক। তার পরেও কাঁচা পাটের অভাব, আর্থিক সঙ্কটের মতো কারণে তালা ঝুলেছে বিভিন্ন জুটমিলে। কয়েক মাস বন্ধের পরে চন্দননগরের গোন্দলপাড়া, শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুটমিল সদ্য খুলেছে। ভদ্রেশ্বরে জুটমিলের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা লগন জুট মেশিনারিজ়ের দরজাও খোলা। কিন্তু, মিলকর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ অন্য কারণে। মিল বন্ধের সময় ভিন্ রাজ্যের যত শ্রমিক ঘরে ফিরে গিয়েছিলেন, মিল খুললেও তাঁদের অনেকেই ফেরেননি। বিকল্প কাজে শ্রমিক মহল্লা ছেড়েছিলেন এমন অনেকেও আর মিলমুখো হননি। ওই সব শ্রমিক আর ফিরবেন কি না, মিলকর্তারা সেই উত্তর খুঁজছেন।
হুগলির এক জুটমিলের কর্তা বলেন, ‘‘কাজের মান ও দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কয়েক মাস আগে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ শিবির করি আমরা। প্রতিটি মিল চত্বরে প্রচার করা হয়। শিবিরে দৈনিক ২০০ টাকা ভাতা, খাবারের ব্যবস্থা ছিল। ৬৮৪ জন শ্রমিক শিবিরে নাম লেখান। আমরা উৎসাহী হই। কিন্তু ক্রমে শ্রমিক সংখ্যা কমে গেল। ওই সংখ্যা ৭ জনে নেমেছে।’’
কেন এই পরিস্থিতি?
আর এক মিলকর্তা জানান, প্রথমত, এই পেশার অনিশ্চয়তা অনুপস্থিতির বড় কারণ। অন্য কাজ পেলে শ্রমিক আর জুটমিলে ফিরছেন না। কোনও শ্রমিক চাইছেন না, তাঁর পরের প্রজন্ম লেখাপড়া শিখে এই পেশায় আসুক। ওই মিলকর্তার দাবি, এ রাজ্য থেকে জুটমিল-শ্রমিকেরা মূলত পঞ্জাব, হরিয়ানা, গুজরাতে চলে যাচ্ছেন অন্য কাজ নিয়ে। সেখানে পিএফ, গ্র্যাচুইটি বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও সুবিধা দেওয়ার চল না থাকলেও মজুরি হিসেবে এ রাজ্যের থেকে বেশি টাকা শ্রমিকরা হাতে পাচ্ছেন। তাতেই আকৃষ্ট হচ্ছেন।
একটি মিলের এক আধিকারিকের দাবি, এক সময় চন্দননগরে তাঁদের জুটমিলে পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক ছিলেন। মাঝে মিল এক বার বন্ধের পরে সেই সংখ্যা কমে ৩৭০০ জনে নেমে আসে। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েক মাস বন্ধের পরে মিল খুলেছে। সবাই কাজে ফিরবেন কি না, সেটাই দেখার।’’ শ্রীরামপুরে একটি মিলে এক সময় ৪ হাজারের বেশি শ্রমিক ছিলেন। এক বার বন্ধের পর ওই সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারে নামে। কয়েক মাস আগে ফের মিল বন্ধের সময় ৩২০০ শ্রমিক ছিলেন। সদ্য মিলের দরজা খুলেছে। এ বার সব মিলিয়ে কত শ্রমিক যোগ দেবেন, সেই চিন্তা কর্তৃপক্ষের।
কী বলছেন শ্রমিক-নেতারা?
জেলা সিআইটিইউ নেতা তীর্থঙ্কর রায় বলেন, ‘‘এখন জুটমিল চালাচ্ছেন মূলত ফড়েরা। বেশি লাভেই নজর। তাই স্থায়ী শ্রমিকদের বসিয়ে অস্থায়ীদের কাজে নেওয়া হচ্ছে। আমাদের দাবি, ৯০% স্থায়ী শ্রমিক নিয়ে মিল চালাতে হবে। সে ব্যাপারে মিলকর্তারাই অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন।’’ আইএনটিটিইউসি-র হুগলি-শ্রীরামপুর জেলা সভাপতি মনোজ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বার বার মিল বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা কাজ করে, ঠিকই। মিল টানা খোলা থাকলে এই পরিস্থিতি কেটে যাবে। শ্রমিকেরাও মহল্লায় ফিরবেন।’’