Death

ছটপুজো করতে এসে গঙ্গায় তলিয়ে মৃত্যু মহিলার

ছটপুজোর জন্য গঙ্গার প্রতিটি ঘাটেই পাড় থেকে জলের উপরে কিছুটা দূর পর্যন্ত বাঁশের ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে, ব্যারিকেড থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে ডুবে গেলেন ওই মহিলা?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাওড়া শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৩৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১টা ১৫। হাতে গোনা পুলিশকর্মী থাকলেও তখনও আসেননি বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের ডুবুরি বা পুরসভার কর্মীরা। শুরু হয়নি ছটপুজোও। পুণ্যার্থীও ছিলেন গুটিকয়েক। আচমকাই তীব্র চিৎকার ভেসে আসে হাওড়ার শিবপুর ঘাটে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত দিক থেকে— ‘ডুবে গেল, ডুবে গেল।’

Advertisement

তখনই ঘাটে উপস্থিত মানুষজন দেখেন, তীব্র গতিতে আসা জোয়ারের স্রোতে এক মহিলা হাবডুবু খেতে খেতে ভেসে যাচ্ছেন গঙ্গার উত্তর দিকে। এই দৃশ্য দেখে তাঁরা চিৎকার করতে থাকেন। চিৎকার শুনে ওই মহিলাকে উদ্ধার করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন শিবপুর ঘাটে নিয়মিত স্নান করতে আসা রোহিত রাই নামে এক যুবক। প্রায় ৫০০ মিটার সাঁতার কেটে তিনি উদ্ধার করেন মহিলাকে। শেষে পুলিশের লঞ্চ এসে মহিলাকে তুলে হাওড়া জেলা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে পরীক্ষা করার পরে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তবে রবিবার রাত পর্যন্ত মহিলার পরিচয় জানা যায়নি।

এ দিন ছটপুজোর শুরুতেই এমন ঘটনায় কার্যত তাল কেটে যায় গঙ্গার দিকে ৯৬টি ঘাটে চলা অনুষ্ঠানের। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা। পৌঁছয় স্কুটি নিয়ে পাহারা দেওয়া হাওড়া সিটি পুলিশের মহিলা বাহিনী ‘উইনার্স’। গঙ্গায় নৌকা করে পাহারা দিতে নামেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের ডুবুরিরা।

Advertisement

ছটপুজোর জন্য গঙ্গার প্রতিটি ঘাটেই পাড় থেকে জলের উপরে কিছুটা দূর পর্যন্ত বাঁশের ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে, ব্যারিকেড থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে ডুবে গেলেন ওই মহিলা? শিবপুর ঘাটে কর্তব্যরত এক মহিলা পুলিশকর্মী জানান, ব্যারিকেডের বিপদসীমা মানেননি ওই মহিলা। জোয়ার চলার সময়ে ব্যারিকেড টপকে চলে গিয়েই তলিয়ে যান তিনি। এ দিন শিবপুর ঘাটে দাঁড়িয়ে ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বিনোদ মেহতা বলেন, ‘‘গা-ভর্তি সোনার গয়না পরা ওই মহিলা ফুল-ফল নিয়ে গঙ্গার ঘাটে ছটপুজো করছিলেন। একাই ছিলেন তিনি। তার পরে গঙ্গায় নেমে স্নান করতে যান। তখনই ভেসে যান তিনি।’’

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, মহিলা একাই ঘাটে এসেছিলেন। পুজো শুরু হওয়ার সময়ের অনেক আগেই তিনি ঘাটে পৌঁছে যান। সাধারণত পুণ্যার্থীরা তাঁদের পরিবার বা প্রতিবেশীদের সঙ্গে দুপুর ৩টের পর থেকে ছটপুজো করতে বিভিন্ন ঘাটে আসতে শুরু করেন। তাই ওই মহিলা কেন একা অত আগে এসেছিলেন, সেই প্রশ্ন ভাবাচ্ছে পুলিশকে। তা ছাড়া, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শিবপুর বা হাওড়া থানায় ওই মহিলাকে নিয়ে কেউ খোঁজ করতে আসেননি। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর মৃত্যু নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। পুলিশ আধিকারিকেরা প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন, ওই মহিলা আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। তবে তাঁর পরিচয় জানার আগে কিছুই নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না।

এ দিকে, এই ঘটনার পরে স্থানীয়েরা পুলিশ-প্রশাসনের দিকে গাফিলতির আঙুল তুলেছেন। দেবু মাইতি নামে এক বাসিন্দার অভিযোগ, ছট উপলক্ষে গঙ্গার ঘাটে পুলিশের কড়া নজরদারির কথা বলা হলেও ঘটনার সময়ে কোনও পুলিশকর্মী বা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীর দেখা মেলেনি। পাশাপাশি, পুণ্যার্থীরা এই অভিযোগও করছেন, দীর্ঘদিন ধরে শিবপুর ঘাটের সংস্কার না হওয়ায় সেখানে স্নান করা খুবই বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই মহিলা সেই কারণেই তলিয়ে গিয়েছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার বলে দাবি করেন তাঁরা।

তবে দুর্ঘটনার সময়ে শিবপুর ঘাটে পুলিশ না থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাওড়ার সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘সকাল থেকেই পুলিশ ছিল। যেহেতু বিকেলের দিকে পুণ্যার্থীরা বেশি সংখ্যায় আসেন, তাই তখন বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তা ছাড়া, পুলিশের লঞ্চই ওই মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement