হাসপাতালের বাইরে পড়ে রোগী। —নিজস্ব চিত্র।
হাসপাতালের বাইরে নর্দমার কাছে পড়ে রোগী। হাতে স্যালাইনের চ্যানেল। চিৎকার করছেন, ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে। উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের বাইরে এমনই দৃশ্যের সাক্ষী হলেন কয়েক জন। পড়ে থাকা ওই রোগীর অভিযোগ, তাঁকে হাসপাতাল থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে হাসপাতালের তরফে যে গাফিলতি ছিল, তা মেনে নিয়েছেন রোগী কল্যাণ সমিতির এক সদস্য।
বালির নিমতলার এলাকার বাসিন্দা প্রশান্ত মণ্ডল নামে এক যুবক উত্তরপাড়ার ওই হাসপাতালে ঢুকতে গিয়ে দেখেন এক জন নর্দমার পাশে পড়ে রয়েছেন। প্রশান্তের কথায়, ‘‘আমাদের এক পরিচিতের মৃত্যু হয়েছে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। আমরা সেই খবর পেয়ে যখন হাসপাতালে ঢুকছি তখন ‘বাঁচাও বাঁচাও’ করে চিৎকার শুনতে পাই। দেখি, হাসপাতালের পাশে নর্দমায় এক জন পড়ে রয়েছেন। তাঁর হাতে স্যালাইনের চ্যানেল। তিনি বলেন, ‘আমাকে উপর থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে।’ ওই রোগীকে তুলে নিয়ে আসি আমরা। কর্তব্যরত নার্সকে ডেকে তাঁকে আবার হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।’’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই রোগীকে কেউ ফেলে দেয়নি। তবে তিনি কী করে হাসপাতালের বাইরে গেলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য ইন্দ্রজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তা ঠিক হয়নি। আমি ঘটনার কথা শুনে নানা জায়গায় জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছি, মাখলার বাসিন্দা যদু দাস নামে ওই ব্যক্তি পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি নিজেই বন্ডে সই করে রিলিজ নিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছেন। হাসপাতালের প্রধান জায়গাগুলিতে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। যাতে নজরদারি করা যায়। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। কোথাও নিশ্চয়ই খামতি হয়েছে।’’
যদুকে ওই হাসপাতালে মত্ত অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছিল কি না এবং তিনি সুযোগ পেয়ে বাইরে চলে গিয়েছিলেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাবাকে ঘিরে এই কাণ্ড নিয়ে যদুর ছেলে রোহিত বলেন, ‘‘গত কাল বাবাকে ভর্তি করেছিলাম। রাত ন’টা নাগাদ খাবার দিয়ে দেখা করে আসি। আজ সকালে শুনলাম এই ঘটনা। কী করে এমন ঘটনা ঘটল তা বুঝতে পারছি না। বাবার শরীর খারাপ। তাও নার্সরা বললেন বাড়ি নিয়ে চলে যেতে। তার পর বন্ডে সই করিয়ে ছুটি দিয়ে দিল। বাবার বাঁ পা ফুলে গিয়েছে। শরীরের কয়েকটি জায়গাও কেটে গিয়েছে।’’
বৃহস্পতিবার উত্তরপাড়া পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর তথা পুর প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য খোকন মণ্ডল যদুর বাড়িতে যান। তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটা শুনেছি। তাঁকে জোর করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগ। সেটা যদি হয়ে থাকে তা হলে হাসপাতাল ঠিক করেনি।’’