তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক সপ্তগ্রামের বিধায়ক তপন দাশগুপ্তের। নিজস্ব চিত্র।
বিরোধীরা শুধু নন, হুগলির পান্ডুয়া ব্লকে তৃণমূলকে ভাবাচ্ছে ‘গোজ-কাঁটা’ও। দলের অনুরোধ-উপরোধ, বহিষ্কারের হুমকি উপেক্ষা করে নির্দলদের অনেকেই ভোট ময়দানে রয়েছেন। তাঁদের থামাতে ফের হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব!
দলীয় প্রার্থীদের প্রচারে আগামিকাল, বুধবার পান্ডুয়ায় আসছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে, সোমবার সপ্তগ্রামের বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত পান্ডুয়ায় এসে কয়েক জন বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেন। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, লড়াই থেকে না-সরলে, নির্বাচনের পরে দলে ঠাঁই মিলবে না। কোনও সুপারিশেও কাজ হবে না। তিনি বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশ কয়েক জন নির্দলপ্রার্থীকে বলেছি, দলের হয়ে প্রচারের জন্য। দল সবাইকে টিকিট দিতেপারে না। দলের হয়ে কাজ করলে, তবেই সম্মান পাওয়া যাবে। আশা করছি, ওঁরা আমার কথা শুনে, দলীয় প্রার্থীদের প্রচারে বেরোবেন।নচেৎ, এর পরে দল কঠোরতমসিদ্ধান্ত নেবে।’’
নির্দল প্রার্থীদের একাংশ অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা সিদ্ধান্ত বদলাবেন না। ভোটে লড়াই করবেনই। এই অবস্থায়, অনেক জায়গায় নির্দল যে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে, শাসক দলের প্রার্থীরা তা মানছেন।
জানা যাচ্ছে, পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতি এবং বিভিন্ন পঞ্চায়েত মিলিয়ে নির্দল প্রার্থী পঞ্চাশের বেশি। তাঁদের প্রতীক নৌকা, মই, ধান, গাড়ি প্রভৃতি। প্রচারে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন তাঁরা।
পান্ডুয়া থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদের বিদায়ী সদস্য রূপা দে’কে প্রতীক দেয়নি দল। বৈঁচি-বাটিকা পঞ্চায়েতের এই নির্দল প্রার্থীর বক্তব্য, ‘‘দলের কথাতেই মনোনয়ন জমা দিয়েছিলাম। দল প্রতীক দেয়নি। মনোনয়ন তুলিনি। লড়াই করব।’’ সরাই-তিন্না পঞ্চায়েতের প্রার্থী মহম্মদ সেবগাতুল্লাহের বক্তব্য, ‘‘ছয় বার পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়িয়ে প্রতি বার জিতেছি। এ বার টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়েছি। দলের অনেক নেতাই ফোন করছেন। তাতে, সিদ্ধান্ত বদল করব না। দল যা সিদ্ধান্ত নেয়, নেবে। ভোটের ময়দানে এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না।’’
বিরোধী বা নির্দলদের আমল না দিয়ে ব্লক তৃণমূল সভাপতি সঞ্জয় ঘোষের দাবি, ‘‘ষোলোটি পঞ্চায়েতেই আমরা ক্ষমতা ধরে রাখব। ৪৮টি পঞ্চায়েত সমিতি, তিনটি জেলা পরিষদ আসনের প্রত্যেকটিতে জয়ী হব।’’ পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী স্বাস্থ্য কর্মাধক্ষ্য সঞ্জিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বৈঁচি-বাঁটিকা পঞ্চায়েতে ৮ জন নির্দল প্রার্থী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩-৪ জন আমাদের সাথেই ঘুরছেন।’’ জেলা পরিষদের প্রার্থী মানস মজুমদার জানান, তিনি বৈঁচিতে কয়েক জন নির্দল প্রার্থীর সঙ্গে আলোচনা করেন। দলের উপরে তাঁদের ক্ষোভ মিটে গিয়েছে। তাঁরা তৃণমূলের হয়েই প্রচারে নেমেছেন। তবে, অনেকেই যে সে পথে হাঁটছেন না, বলাই বাহুল্য।
তৃণমূল সূত্রে খবর, আগামিকাল হেলিকপ্টারে পান্ডুয়ায় আসবেন অভিষেক। কলবাজার থেকে জিটি রোড ধরে কাকলি সিনেমাতলা পর্যন্ত পদযাত্রা করবেন। অভিষেকের কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ-প্রশাসনের ঘুম ছুটেছে। এক মাস আগে নবজোয়ার কর্মসূচিতে পান্ডুয়ায় অভিষেকের সভা ঠিক হলেও, পরে বাতিল হয়।