হুগলি সংশোধনাগার সংলগ্ন নজরুল ইসলামের মূর্তির সামনে পোস্টার। নিজস্ব চিত্র।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মে শুক্রবার প্রকাশিত একটি ছবিতে কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত ‘কারার ওই লৌহকপাট...’ গানের সুর বিকৃত করার অভিযোগ নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে। এক শতাব্দী আগে লেখা ওই গানে সুর দিয়েছিলেন নজরুল নিজেই। তাঁর সেই গানে যে সুর নিয়ে বিতর্ক, তার স্রষ্টা অস্কারজয়ী সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমান। এর প্রতিবাদে শনিবার হুগলি জেলের সামনে নজরুলের মূর্তি ঘিরে পোস্টার সাঁটল চুঁচুড়ার একটি সাংস্কৃতিক সংস্থা। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত দাবি করা হয়। সমাজমাধ্যমেও শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। সাংস্কৃতিক কর্মী ও ইতিহাসের চর্চা করা লোকজনের একাংশের পাশাপাশি প্রতিবাদ এসেছে বিদ্রোহী কবির পরিবারের তরফেও।
নজরুলের জন্মস্থান বর্ধমানের চুরুলিয়াতেই থাকেন কবির ছোট ভাই কাজি আলি হোসেনের নাতনি সোনালি কাজি। ফোনে তিনি আনন্দবাজারকে জানান, ১৯২১ সালে নজরুল গানটি কবিতার আকারে লেখেন। পরে সুর দেন। তাঁর কথায়, ‘‘এমন জ্বালাময়ী গানের সুরের বিকৃতি মেনে নেওয়া যায় না। বিশ্ববরেণ্য মানুষের সুরের বদল করে কেউ ব্যবসা করলে, আমরাও ছেড়ে কথা বলব না। এ আর রহমান নিজে এই কাজ করলেন, না কি তাঁকে দিয়ে করানো হল, তা নিয়ে তদন্ত হোক।’’ সোনালির সংস্থা ‘দোলনচাঁপা নজরুল ফাউন্ডেশন’ সোমবার আসানসোলে প্রতিবাদে সভার ডাক দিয়েছে। সেখানে রাজ্যের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের যোগ দেওয়ার কথা।
চুঁচুড়ার সাংস্কৃতিক সংস্থাটির কর্ণধার তথা ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী মৈত্রী দে সিংহ বলেন, ‘‘এ আর রহমানের মতো এক জন শিল্পী এটা কী ভাবে করলেন! ধিক্কার জানাই।’’ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুজিতকুমার চন্দ্রের মন্তব্য, ‘‘কপিরাইট না থাকায় রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে যা খুশি হচ্ছে। নজরুল-গীতি নিয়েও সেটাই হল। বিষয়টিতে সরকারের হস্তক্ষেপ করা দরকার।’’
১৯২১ সালে চিত্তরঞ্জন দাস গ্রেফতার হন। তখন দেশবন্ধুর স্ত্রীর অনুরোধে ‘কারার ওই লৌহকপাট...’ রচনা করেন নজরুল। পরের বছর ‘ধূমকেতু’ পত্রিকায় রাজনৈতিক কবিতা ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ ছাপার ‘অপরাধে’ ব্রিটিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে হুগলি জেলে বন্দি হন নজরুল। পরে সেই গানের সুর দেন নিজেই।