বিজেপির নবান্ন অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ ধরা পড়েন বলবিন্দর। —ফাইল চিত্র।
১১ দিন পুলিশ হেফাজতে থাকার পর জামিন পেলেন পাগড়ি-কাণ্ডে ধৃত বলবিন্দর সিংহ। হাওড়ার মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত সোমবার তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে। গত ৮ অক্টোবর বিজেপি-র নবান্ন অভিযানে হাজির থাকা বলবিন্দরকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ পাকড়াও করেছিল পুলিশ।
হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট দাবি করে, নিয়ম ভেঙে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জমায়েতে শামিল হয়েছিলেন বলবিন্দর। যদিও গ্রেফতারের সময় ওই শিখ যুবকের পাগড়ি খুলে যাওয়া নিয়ে অন্য বিতর্ক দানা বাঁধে। বিজেপি থেকে শুরু করে ক্রিকেটার হরভজন সিংহ, শিরোমণি অকালি নেতা সুখবিন্দর সিংহ, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংহ পাগড়ি-কাণ্ডের প্রতিবাদ করেন। অভিযোগ ওঠে, পুলিশ ওই শিখ যুবকের পাগড়ি খুলে দিয়েছিল। বিষয়টি শিখ ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন অমরিন্দর থেকে হরভজন সকলে। বিতর্ক আরও দানা বাঁধে দিল্লির শিখ গুরুদ্বার কমিটির সদস্যেরা হাওড়ায় এসে পৌঁছনোর পর। শিখ ধর্মীয় নেতারা বলবিন্দরের মুক্তির আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। মুক্তি না দিলে ধরনায় বসার হুমকি দেন বলবিন্দরের স্ত্রী করমজিৎ কউর।
যদিও রাজ্য সরকার এবং রাজ্য পুলিশ প্রথম থেকেই তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানায় যে, ইচ্ছাকৃত ভাবে কেউ বলবিন্দরের পাগড়ি খুলে দেয়নি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার শিখ ধর্মাবলম্বী এবং শিখ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
আরও পড়ুন: পুজো প্যান্ডেলে দর্শক নয়, স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট
তার পরেও বিষয়টি ঘিরে ধর্মীয় ভাবাবেগের প্রশ্ন ওঠায় পরিস্থিতি সামলাতে ময়দানে নামেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার পুরপ্রশাসক তথা রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে তিনি শিখ ধর্মীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এর পরই, মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে ‘পুজোর উপহার’ সালোয়ার স্যুট এবং শাল পৌঁছয় বলবিন্দরের স্ত্রী এবং পরিবারের কাছে। মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্য উপহারের পাল্টা তাঁকে সম্মান জানিয়ে পাগড়ি উপহার দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন বলবিন্দরের স্ত্রী করমজিৎ। বলবিন্দরের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলও বাতিল করা হয়। শিখ ধর্মীয় নেতা থেকে শুরু করে বলবিন্দরের স্ত্রী-পরিবার প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছার।
সেখানেই ইঙ্গিত ছিল, সোমবার আদালতে পেশ করা হলে জামিন পেতে পারেন প্রাক্তন সেনাকর্মী বলবিন্দর। সোমবার তাঁর আইনজীবী অজিত মিশ্র জামিনের আবেদন জানিয়ে বিচারককে বলেন, ‘‘পুলিশ দাবি করেছে, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যাবহারের জন্য বলবিন্দর যে লাইসেন্স দেখিয়েছেন তা জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরি জেলায় ব্যবহার করার জন্যই সীমাবদ্ধ। তার বাইরে ব্যবহার করা বেআইনি। ওই লাইসেন্স নিয়ে যেখানে তদন্ত চলছে, সেখানে মাঝপথে কী করে পুলিশ ওই লাইসেন্স সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনল?”
আরও পড়ুন: পিকে-র নিদান, ম্যাডামের নির্দেশ, চেনা ‘কেষ্ট’ এখন পরিবর্তনে অচেনা
এ দিন আদালতে সরকার পক্ষের আইনজীবী তারাগতি ঘটক কার্যত বলবিন্দরের জামিনের বিরোধিতা করেননি। বলবিন্দরের আইনজীবী দাবি করেন, ‘‘তদন্তকারীদের পক্ষ থেকেও আদালতকে জানানো হয়েছে, লাইসেন্সের বৈধতা যাচাই-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তদন্ত হয়ে গিয়েছে। বলবিন্দরকে ফের হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন নেই।” এর পরেই বলবিন্দরের জামিনের আর্জি মঞ্জুর করেন বিচারক। তবে তাঁকে তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।