নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তাণ্ডব হাওড়ায়।—ছবি পিটিআই।
হাওড়া জুড়ে লাগাতার গোলমালের পিছনে ‘বহিরাগত দুষ্কৃতীদের’ মূল ভূমিকা ছিল বলে তথ্য পেয়েছে হাওড়া সিটি পুলিশ। গত শনিবার থেকে হাওড়ার উলুবেড়িয়া, সাঁকরাইল, মানিকপুর, বাঁকড়া এবং কোনা এক্সপ্রেসের গরফা এলাকায় তাণ্ডবের কারণ অনুসন্ধান করার পর পুলিশের দাবি, দুষ্কৃতীদের বড় দল মিলে ওই সব এলাকায় গোলমাল পাকিয়েছিল পরিকল্পিত ভাবে। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘বহিরাগত দুষ্কৃতীদের ২ জনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে বাকিদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে তাদের গ্রেফতার করা হবে।’’
তদন্তকারীদের দাবি, প্রায় ২৫০ জন দুষ্কৃতী দু’টি ভুটভুটি করে গত শুক্রবার কলকাতা থেকে জলপথে হাওড়ায় ঢুকেছিল। গঙ্গা পেরিয়ে তারা প্রথমে গিয়েছিল উলুবেড়িয়ায়। সেখানে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের উলুবেড়িয়া স্টেশন আক্রমণ করে লুঠপাট করে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, ওই দলটিই পরের দিন সাঁকরাইল স্টেশন ভাঙচুর করে আশ্রয় নেয় হাওড়ারই জগাছার সুলতানপুরের বোকোপাড়ায়। কিছু দুষ্কৃতী মিশে যায় কাছেই উনসানিতে হওয়া কোনা এক্সপ্রেসওয়ের অবরোধে। পুলিশ জানায়, এলাকাবাসীদের একাংশকে ‘উস্কে দিয়ে’ গরফা সেতুতে অবরোধের জেরে আটকে পড়া বাস-সহ ১০টি গাড়িতে আগুন লাগায় ওই দুষ্কৃতীরা।
পুলিশ জানায়, সোমবার সকাল থেকে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছিল অঙ্কুরহাটি-সহ বাঁকড়ার কবর পাড়ায়। সকাল থেকেই হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে ছিলেন। ফলে বিক্ষোভকারীদের রাস্তা অবরোধের পরিকল্পনা সফল হয়নি। পরে দুপুরে ওই আন্দোলনকারীদের উস্কে তাঁদের সঙ্গে মিশে গিয়ে একটা বড় মিছিল অঙ্কুরহাটির ভিতর দিয়ে প্রথমে সলপ মোড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। পরে এরাই অবরোধ তুলতে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ার ঘটনাকে ‘পুলিশ গুলি চালাচ্ছে’ বলে গুজব তুলে কবরপাড়ায় থাকা বিক্ষোভকারীদের উত্তেজিত করে তোলে। হাওড়া–আমতা রোডে বহুতলের উপর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা, পাথর ছুঁড়ে অশান্ত করে তোলে এলাকা।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাঁকরাইলের মানিকপুরের ঘটনা যে পূর্ব পরিকল্পিত, তা পরিষ্কার হয়ে যায় তিনকপাটি পোল থেকে একটি মিছিল ধূলাগড়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার খবর সামনে আসতেই। পুলিশ মিছিল করতে দেয়নি। এরপরেই গুজব রটিয়ে স্থানীয়দের একাংশকে উত্তেজিত করে পুলিশকে আক্রমণ করার পিছনে ওই দুষ্কৃতীদের ভূমিকা ছিল বলে তিনি জানান। ওই পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘সমস্ত ঘটনার পিছনে বহিরাগতদের ভূমিকা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই ভাবে পুলিশকে আক্রমণ করতে পারেন না। ফের যাতে এমন না ঘটে, সেজন্য আমরা সতর্ক আছি।’’