গরমে পুড়ছে বাংলা! আবহাওয়া দফতর জানিয়ে দিয়েছে, আগামী বেশ কয়েক দিন রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তাপপ্রবাহ হতে পারে। অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়া আটকাতে দুপুরের চড়া রোদ এড়ানোর পরামর্শও দিয়েছে তারা। কিন্তু সাবধান হয়েও যদি গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তা হলে কী করা উচিত? বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলল আনন্দবাজার অনলাইন।
গরমে সুস্থ থাকতে প্রচুর জল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, গরমে শারীরিক সমস্যাগুলির মূল কারণ শরীরে জলের অভাব। তাই চিকিৎসকরা বলছেন, তেষ্টা না পেলেও জল খেতে হবে।
শরীর ঠাণ্ডা করতে প্রয়োজনে আইস ওয়াটার বা ঠান্ডা জলে বার বার গা ধোওয়ার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, এই গরমে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। প্রবল গরমে শরীরের তাপমাত্রাও বেড়ে যায়। ঠাণ্ডা জলে স্নান সেই সমস্যা কাটাবে।
গত দু’এক দিন ধরেই গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর আসছে। রাস্তায় বেরিয়ে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। চিকিৎসকদের কথায়, এই ধরনের অসুস্থতার কারণ হিট স্ট্রোক হতে পারে। যার মূল কারণ, শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বৃদ্ধি।
পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা বা বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস। বাইরের তাপমাত্রা খুব বেড়ে গেলে বা কমে গেলে শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বাড়লেই হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা দেখা যায়। এই হিট স্ট্রোকের উপসর্গ আগে থেকে বুঝতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, আগামী বেশ কয়েক দিন পশ্চিমের জেলাগুলিতে তাপপ্রবাহের পাশাপাশি লু বা গরম হাওয়া বইতে পারে। রাজ্যবাসীকে তাদের পরামর্শ, আগামী কয়েকটা দিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত পারলে রাস্তায় বেরোবেন না।
এ ছাড়া আর কী কী সমস্যা হতে পারে? হলে কী করবেন, সেই পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথমেই সানবার্ন বা প্রবল রোদে ত্বক পুড়ে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছেন চিকিৎসকরা। এ ক্ষেত্রে সাধারণত ত্বক লাল হয়ে যায়। সঙ্গে ত্বকে ফুসকুড়িও দেখা যেতে পার।
‘সানবার্ন’ হলে ত্বকের আক্রান্ত জায়গাটিতে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে কিছু না লাগানোই ভাল। ফুসকুড়ি হলে তা ফাটানোর কোনও চেষ্টা যেন করা না হয়। বদলে চড়া রোদে না থাকা, ঠান্ডা জলে ভেজানো কাপড় ত্বকের উপর রাখা, তার পরও না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
গরমে ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে। অনেকটা অংশ জুড়ে র্যাশ বেরতে পারে। একে ‘হিট র্যাশ’ বলা হয়। ‘হিট র্যাশ’ এড়াতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। রোদ এড়িয়ে ছায়া বা ঠান্ডা জায়গায় থাকলে এই সমস্যা এড়ানো যেতে পারে।
শরীরে জলের ঘাটতি হলে এবং খনিজ পদার্থ বেরিয়ে গেলে পেশিতে টান ধরতে পারে। শরীর জলশূন্য হয়ে গেলে পেটে ব্যথা করতে পারে। একে ‘হিট ক্র্যাম্পস’ হলা হয়। এই সমস্যা এড়াতে জল বেশি করে খেতে হবে, প্রয়োজনে নুন-চিনি জল বা ওআরএস হাতের কাছে রাখতে হবে, প্রয়োজন বুঝলে খেকে হবে, ছায়া বা ঠান্ডা জায়গায় থাকতে হবে।
অতিরিক্ত ঘাম হলে, নাড়ির গতি দুর্বল হলে এবং এই সব কিছুর সঙ্গে গা গোলানো ভাব বা বমি হওয়া, মাথা ব্যথা এবং দুর্বলতা থাকলে ধরে নিতে হবে ‘হিট এগ্জরশন’-এ আক্রান্ত হয়েছেন। এ ধরনের অসুস্থতা বোধ করলে পোশাক ঢিলে করে দিতে হবে। ঘাড়ে, গলায় ভেজা কাপড় দিয়ে মোছার পাশাপাশি বেশি করে জল খাওয়া, রোদে থাকলে দ্রুত ছায়া আছে এমন জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে উপসর্গ বাড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘হিট স্ট্রোক’-এ শরীরে তাপমাত্রার ভারসাম্য থাকে না। তাই ঘাম হয় না। কিন্তু হিট স্ট্রোক হলে তা থেকে মস্তিষ্ক, কিডনি, হৃদ্যন্ত্রে প্রভাব পড়তে পারে। রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। ভুল বকতে পারেন। ঘাম না হওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। এর পাশাপাশি মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরার মতো উপসর্গও দেখা যেতে পারে। এমন সমস্যা হলে দ্রুত রোগীকে চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে রোগীকে ঠান্ডা জলে স্নান বা ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছিয়ে দেওয়া।
এ ছাড়া গরম থেকে বাঁচতে যখন তখন যে কোনও ঠান্ডা পানীয় বা রাস্তায় বিক্রি হওয়া কাটা ফল খাওয়ার বিষয়েও সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের কথায়, এই ধরনের পানীয় বা কাটা ফলে জীবাণু থাকে। তা থেকে ডাইরিয়া, হেপাটাইটিস হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।