Crime

Hanskhali Minor Girl Death: মৃত্যুর পরে বৈধ শংসাপত্র ছাড়াই কিশোরীর দেহ দাহ কী ভাবে, উঠছে প্রশ্ন

মঙ্গলবার সকালে যে শ্মশানে মেয়েটিকে দাহ করা হয়েছিল, সেখানে সৎকার করতে গেলে কোনও দিনই কোনও ‘কাগজপত্র’ লাগে না! গত বিশ বছর ধরে এ রকমই চলে আসছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২২ ০৫:৫৪
Share:

বিছানায় পড়ে রইল খেলার সঙ্গী পুতুল। রবিবার নির্যাতিতার বাড়িতে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

রক্তক্ষরণে মৃত্যুর আগে তাকে ডাক্তার দেখানো যায়নি। মৃত্যুর পরে বৈধ শংসাপত্র বা ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ ছাড়াই নদিয়ার ধর্ষিতা কিশোরীর দেহ গ্রামের শ্মশানে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

কী করে তা সম্ভব হল?

শাসন সূত্রের খবর, গ্রামাঞ্চলে শ্মশানের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থেকে শুরু করে যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ থাকে গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতে। ফলে ডাক্তারের দেওয়া ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ ছাড়া যদি মৃতদেহ সৎকার হয়ে থাকে, তার দায় স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপরেই বর্তায়। তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা মনে করছেন, ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ ছাড়া যদি কিশোরীর মৃতদেহ দাহ করার সুযোগ না থাকত, তা হলে ঘটনাটি এত দিন এত সহজে চেপে যাওয়া যেত না।

রবিবার ওই এলাকায় গিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে যে শ্মশানে মেয়েটিকে দাহ করা হয়েছিল, সেখানে সৎকার করতে গেলে কোনও দিনই কোনও ‘কাগজপত্র’ লাগে না! গত বিশ বছর ধরে এ রকমই চলে আসছে।

Advertisement

গ্রামবাসী জানান, আগে ওই শ্মশানে এক জন সাধু থাকতেন। তিনি মারা যাওয়ার পরে তাঁর প্রৌঢ়া স্ত্রী মাঝে-মধ্যে শ্মশানের ঘরে এসে থাকেন। বাকি সময়ে শ্মশান জনশূন্যই থাকে। ফলে কে কখন কার মৃতদেহ পুড়িয়ে গেল, তা দেখার কেউ নেই। কোনও রেজিস্টারে তা নথিভুক্ত করার তো প্রশ্নই ওঠে না। শ্মশানটির কোনও সরকারি অনুমোদন বা রেজিস্ট্রেশনও নেই।

মৃত কিশোরীকে নিয়ে মঙ্গলবার সকালে যাঁরা শ্মশানে সৎকার করতে গিয়েছিলেন, তাঁদের এক জনের দাবি, “মেয়েটির বাড়ির লোকেরা এসে বললেন যে, প্রবল রক্তপাতে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবেশী হিসাবে তাঁদের পাশে থাকতেই শ্মশানে গিয়েছিলাম।” আর এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এই শ্মশানে কোনও নথিভুক্তির খাতা নেই। কিছু দেখার লোকও নেই। আমরা এ ভাবেই মৃতদেহ দাহ করে আসছি। কোনও কারণে সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হলে, পাশের একটি শ্মশান থেকে নিয়ে আসি। এ সব নিয়ে কেউ কোনও দিন প্রশ্ন তোলেনি।”

Advertisement

সরকারি অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও ২০১৫-১৬ সালে তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক নিজের এলাকা উন্নয়নের তহবিল থেকে দু’লক্ষ টাকা দিয়ে কংক্রিটের চুল্লি বানিয়ে দিয়েছিলেন। সেখানে ফলকে লেখা আছে ‘সৌজন্য ... গ্রাম পঞ্চায়েত’। সেই চুল্লিতেই কাঠের আগুনে মৃতদেহ দাহ করা হয়। এখন প্রশ্ন উঠছে, কী ভাবে একটা সরকারি অনুমোদনহীন শ্মশানে বিধায়কের তহবিল থেকে চুল্লি তৈরির টাকা দেওয়া হল? সেই বিধায়ক এখন প্রয়াত। জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র বাণীকুমার রায় বলেন, “যিনি টাকা দিয়েছিলেন, তিনি তো নেই। আদৌ কী ঘটেছিল, কেনই বা ঘটল, আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।”

এখন প্রশ্ন উঠছে, বিধায়ক তহবিলের যদি টাকা দেওয়াই হয়ে থাকে, কেন সেখানে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারি থাকল না? স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের ব্যাখ্যা, “অনুমোদন না থাকায় ওই শ্মশান আমরা দেখাশোনা করি না। সেটি পরিচালনা করে একটি কমিটি। যা বলার, তারাই বলতে পারবে।” গ্রামবাসী জানান, শ্মশানটি দেখাশোনার জন্য তাঁরাই নিজেদের মতো করে ওই কমিটি গড়েছেন। সেটিরও সরকারি অনুমোদন নেই।

সেই কমিটির অন্যতম কর্তার বক্তব্য, “শ্মশানের সরকারি অনুমোদন পাইনি বলেই রেজিস্ট্রি খাতায় কিছু নথিভুক্ত করতে পারি না। সর্বক্ষণের জন্য কাউকে রাখতেও পারি না।” সেই সুযোগেই তো ওই কিশোরীর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত না করিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হল? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। স্থানীয় বাসিন্দা তথা তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের বক্তব্য, “প্রায় বিশ বছর ধরে এই ভাবেই তো ওই শ্মশানে মৃতদেহ দাহ হয়ে আসছে। কেউ কোনও দিন প্রশ্ন তোলেনি। আমাদেরও মাথায় বিষয়টা আসেনি। এর পর থেকে যাতে আর এমনটা না হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”

পুলিশ কী ভাবে এত দিন একটি অনুমোদনহীন শ্মশান চলতে দিল? অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রানাঘাট) রূপান্তর সেনগুপ্তের বক্তব্য, “এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়, প্রশাসনের বিষয়।” স্থানীয় বিডিও রত্না চক্রবর্তী বলেন, “শ্মশানের জন্য সরকারি অনুমোদন প্রয়োজন। তার উপরে পুরসভা বা গ্রাম পঞ্চায়েতের নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং সেখানে মৃতদেহ দাহ করতে গেলে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেট প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটেছে, তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। সেই মতো পদক্ষেপও করা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement