সে দিন: আদালত চত্বরে বৈশাখী-শোভন। ফাইল চিত্র
আগে বিভিন্ন সময়ে অনেক কথা বলেছেন। তবে মঙ্গলবার শোভন চট্টোপাধ্যায় মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর থেকে প্রচার মাধ্যমের সামনে ধরা দিচ্ছেন না বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের অন্দরে তো বটেই, সাধারণ ভাবেও শোভনের এই রাজনৈতিক পরিণতির জন্য অভিযোগের আঙুল উঠছে বৈশাখীর সঙ্গে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠতা’র দিকে। বলা হচ্ছে, এই সম্পর্কের কারণেই দীর্ঘদিন ধরে শোভন তাঁর প্রশাসনিক ও দলীয় কাজকর্ম ঠিক মতো করছিলেন না। তাঁর বিবাহিত জীবনও ভাঙনের মুখে।
বৈশাখীর বক্তব্য জানা না গেলেও বুধবার মুখ খুলেছেন তাঁর স্বামী মনোজিৎ মণ্ডল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মনোজিৎবাবু এ দিন বলেন, ‘‘শোভনবাবু অত্যন্ত আবেগপ্রবণ। বৈশাখীর বন্ধু। আমাদের পরিবারের বন্ধু। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি যখন সংকটে পড়েছিলেন, তখন আমরা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলাম।’’
‘সংকটের বন্ধু’ হিসেবে বৈশাখীর কথা এখনও শতমুখে বলছেন শোভন। কে এই বৈশাখী? শোভনের সঙ্গে তাঁর কত দিনের পরিচয় এবং কী ভাবে?
আরও পড়ুন: বৈশাখীর অপমানই বড় ‘যন্ত্রণা’ শোভনের
নানা সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী শোভনের সঙ্গে বৈশাখীর প্রথম যোগাযোগ মিল্লি আল আমিন কলেজে গোলমালের সূত্রে। শোভন তখন মেয়র। বৈশাখী তার আগে থেকেই ওই কলেজের শিক্ষক। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আইনজীবী হিসেবে দীর্ঘ দিন মনোজিৎবাবু ও বৈশাখীর পরিচিত। স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে ‘বোঝাপড়া’ করিয়ে দেওয়ার জন্য কল্যাণবাবু বৈশাখীকে শোভনের কাছে পাঠিয়ে ছিলেন। সেই যোগাযোগ খুব বেশি দূর এগোয়নি। বরং কিছুটা আড়ষ্টতাই ছিল। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের আলোচনা সভায় প্রয়োজনে বৈশাখী মেয়র হিসেবে শোভনের সমালোচনাও করতেন।
সেই সময় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈশাখীর যোগাযোগ ছিল বেশি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে প্রেসিডেন্সির স্নাতক এবং যাদবপুরে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি তিনি। পার্থবাবু শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পর বৈশাখী তৃণমূলের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হন। মিল্লি আল আমিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষও করা হয় তাঁকে। তখনও তিনি শোভনের এত ঘনিষ্ঠ ছিলেন না।
আরও পড়ুন: কেউ তো জিতল না এতে, বলছেন অভিমানী শোভন-পুত্র
সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন বৈশাখী তাঁকে দেখতে যান। সেখানে তখন শোভনও ছিলেন। সূত্রের খবর, শোভন তাঁকে দেখে হাল্কা চালে একটু কটাক্ষ করেন। তারপর আরও একবার সাংসদ কল্যাণবাবুর কল্যাণে শোভনের সঙ্গে বৈশাখীর দেখা হওয়ার ব্যবস্থা পাকা হয়।
সেই দেখা হল। নোটবন্দি নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে তৃণমূলের বিক্ষোভ মঞ্চে। ধাপে ধাপে ঘনিষ্ঠতা বাড়ল। বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করলেন শোভন। বৈশাখীকে বললেন তাঁর ‘দুর্দিনের বন্ধু’।
যোগাযোগ এতটাই নিবিড় হয়ে ওঠে যে, কলকাতা, দিল্লি সর্বত্র শোভনের সঙ্গে ছায়াসঙ্গীর মতো দেখা যায় বৈশাখীকে। শোভনের আইনগত যাবতীয় কাজকর্ম দেখাশোনার ভার নিজের হাতে তুলে নেন বৈশাখী। শোভন পরিবেশমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁকে জলাভূমি সংক্রান্ত একটি কমিটির সদস্যও করে নেন। শোভনের গোলপার্কের ফ্ল্যাটে যে কোনও সময়ে বৈশাখীর গতিবিধি অবাধ। পুরসভার বিভিন্ন নথিপত্রও খোলা খাতার মতো বৈশাখীর চোখের সামনে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠনের পদ থেকে বৈশাখীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শোভন পরিবেশ দফতর হারানোর পর সেখানকার কমিটিতেও বৈশাখী আর নেই। এ সব নিয়ে ক্ষোভ গোপন করেননি শোভন।