সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিক। ছবি: সংগৃহীত।
আর জি করের সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রেই কি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ‘দাদা’ হয়ে উঠেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিক! সন্দীপের সঙ্গে মেডিক্যালের প্রাক্তনী মুস্তাফিজুরের এক ফ্রেমে ছবি প্রকাশ্যে আসার পরেই প্রশ্ন তুলছেন কলেজের পড়ুয়া এবং হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ।
এই মুস্তাফিজুর ও তাঁর ‘দলবলে’র বিরুদ্ধে একের পর এক ‘বিস্ফোরক’ অভিযোগ উঠেছে। মেডিক্যালের এক ছাত্রীর দাবি, “মুস্তাফিজুরের দলবল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকে। আইটেম সং চালানো হয়, নাচতে বলা হয়।” এক জুনিয়র ডাক্তারের অভিযোগ, “মুস্তাফিজুর তিন বছর আগে পাস করে গিয়েছে। তাও হস্টেলে থাকে। নতুন ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে টাকা তোলে ওরা। কথা না শুনলে ফেল করানোর হুমকি দেওয়া হয়।”
মেডিক্যালের অধ্যক্ষ মৌসুমী নন্দী যদিও বলছেন, “কোনও ছাত্র এখানে কিছু নিয়ন্ত্রণ করে না।” কলেজ কর্তৃপক্ষ স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করেননি? অধ্যক্ষের জবাব, “আমরা কোনও দিন র্যাগিংয়ের অভিযোগ শুনিনি।” মুস্তাফিজুর শুক্রবার রাত পর্যন্ত ফোন ধরেননি।
সন্দীপের সঙ্গে মুস্তাফিজুরের যোগাযোগ কী ভাবে? দু’জনে এক ফ্রেমে (ছবির সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) এলেন কী করে? মেডিক্যালের পড়ুয়া ও হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, এখানকার এক প্রাক্তনী এখন আর জি করে রয়েছেন। ওই প্রাক্তনীর মাধ্যমেই নাকি সন্দীপের মতো ‘প্রভাবশালী’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে মুস্তাফিজুরের। অভিযোগ, সেই ঘনিষ্ঠতা দেখিয়ে চলত দাদাগিরি। শুধু পড়ুয়া বা জুনিয়র চিকিৎসকেরাই নন, তাঁর ভয়ে নাকি কাঁটা হয়ে থাকতেন হাসপাতালের অনেকেই। অভিযোগ, অধ্যক্ষার অফিস থেকে হাসপাতাল সুপারের অফিস— অবাধে ঢুকতে পারতেন মুস্তাফিজুর। হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, “কাকে বলব? কথায় কথায় স্বাস্থ্যভবন দেখাত!”
মুস্তাফিজুর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বড় নেতা হিসেবেও নিজেকে দাবি করতেন বলে পড়ুয়াদের অভিযোগ। রাজ্যে ছাত্রভোট না হলেও রাজনৈতিক দলগুলির ছাত্র সংগঠনের, বিশেষত টিএমসিপির ইউনিট কলেজগুলিতে আছে। মুস্তাফিজুর নিজেকে মেদিনীপুর মেডিক্যালের টিএমসিপি ইউনিটের চিফ কোঅর্ডিনেটর বলে দাবি করতেন। এ নিয়ে প্রশ্ন শুনে ফোন কেটে দেন টিএমসিপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। টিএমসিপির মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ইউনিটের সভাপতি অর্পণ বিশ্বাস কিছু বলতে চাননি। তবে ইউনিটের এক নেতার দাবি, “অপপ্রচার হচ্ছে। কলেজ কর্তৃপক্ষকে সবটা জানিয়েছি। হাসপাতালে নিরাপত্তার দাবি প্রধান। কেউ কেউ প্রধান দাবি থেকে সরে এসে ব্যক্তিগত দাবি সামনে আনছে।”