হাসপাতালে ‘ব্যবসা’ ফাঁস

সেই আবেদনের শুনানিতে সরকারি কৌঁসুলির বয়ানেই হাসপাতাল ঘিরে এক শ্রেণির ‘দাদা’ কী ভাবে ব্যবসা করেন তা সামনে এল। আর তাতে যে আবেদনকারী যুবক এবং তাঁর বাবাও যুক্ত সেই দাবিও করলেন সরকারি কৌঁসুলি। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:০০
Share:

এ-ও এক ধরনের ব্যবসা। গোলমাল বাধিয়ে হাসপাতাল অচল করে দিয়ে কর্তৃপক্ষ ও রোগীর পরিবার, দুই তরফ থেকেই টাকা আদায়ের ব্যবসা!

Advertisement

বেসরকারি হাসপাতালগুলির কেউ কেউ অনেক সময়েই পাড়ার এক শ্রেণির ‘দাদা’-র বিরুদ্ধে হাসপাতালের ভিতরে বিক্ষোভ-ভাঙচুরে মদত দেওয়ার অভিযোগ করে থাকেন। ওই সব বিক্ষোভের মূল উদ্দেশ্য যে চাপ দিয়ে বিল কমানো এমন অভিযোগও ওঠে। কিন্তু কাগজে কলমে তার কোনও প্রমাণ হাসপাতালগুলি দিতে না পারায় সেই অভিযোগ আমল পায়নি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই।

কিন্তু ওই সব অভিযোগ যে সবটাই ফেলে দেওয়ার নয়, সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের করা এক মামলায় তা মোটামুটি পরিষ্কার হল। পুলিশ বেআইনি ভাবে আটকে রেখেছিল এই অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন বন্দর এলাকার এক যুবক শুভম সিংহ। আবেদনে তিনি পুলিশের এই ভূমিকার সিবিআই তদন্তের দাবি করেন। আর সেই আবেদনের শুনানিতে সরকারি কৌঁসুলির বয়ানেই হাসপাতাল ঘিরে এক শ্রেণির ‘দাদা’ কী ভাবে ব্যবসা করেন তা সামনে এল। আর তাতে যে আবেদনকারী যুবক এবং তাঁর বাবাও যুক্ত সেই দাবিও করলেন সরকারি কৌঁসুলি।

Advertisement

সরকারি কৌঁসুলি শুভব্রত দত্ত আদালতে বলেন, গত বছর অগস্ট মাসে একবালপুরের বেসরকারি হাসপাতাল পুলিশকে জানায়, স্থানীয় একদল যুবক রোগীদের পরিবারের হয়ে হাসপাতালের বিল কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। কখনও পাঁচ লক্ষ টাকার বিল কমিয়ে আট হাজার টাকা, কখনও তিন লক্ষ টাকার বিল কমিয়ে দশ হাজার টাকা করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সন্দেহ, যে পরিমাণ টাকা কমানো হয়েছে, তার একটা বড় অংশ রোগীর পরিবারের কাছ থেকে আদায় করছেন ওই যুবকেরা।

সরকারি কৌঁসুলি সওয়ালে বলেন, পুলিশি তদন্তে জানা যায়, আবেদনকারী ওই যুবক শুভম সিংহের বাবা রাকেশ সিংহ ওই সব যুবককে পরিচালনা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় জালিয়াতি, প্রতারণা ও কারচুপির ৩৮টি মামলা রয়েছে। হাসপাতালের অভিযোগ পেয়ে থানায় ডেকে পাঠানো হয় শুভমকে। সরকারি কৌঁসুলির দাবি, থানা থেকে বেরিয়ে সোজা এসএসকেএম হাসপাতালে চলে যান শুভম। সেখানে চিকিৎসকদের চাপ দিয়ে পুলিশের মারে জখম হওয়ার জন্য শংসাপত্র লিখিয়ে নেন। পরে অবশ্য ওই চিকিৎসকেরা আলিপুর আদালতে গিয়ে জোর করে শংসাপত্র লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ জমা দেন শুভমের বিরুদ্ধে।
আলিপুর আদালতের বিচারক কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ পেয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করছে পুলিশ। শুভব্রতবাবু আদালতকে বলেন, ‘‘সেই তদন্তের কথা জানতে পেরে শুভম পুলিশের বিরুদ্ধে আবেদন নিয়ে হাইকোর্টে এসেছেন।’’

সরকারি কৌঁসুলির বক্তব্য শুনে বিচারপতি বসাক মামলার আবেদনকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের উদ্দেশে বলেন, পুলিশের অভিযোগ নিয়ে তাঁর কিছু বলার রয়েছে কি না। বিকাশবাবু জানিয়ে দেন, তাঁর কিছু বলার নেই। এরপরেই বিচারপতি দেবাংশু বসাক ৭ মার্চ তদন্তের সামগ্রিক রিপোর্ট পেশ করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement