Crisis

Crisis in Hospitals: ‘ছায়া টাকায়’ মিলছে না সুতো থেকে স্টেন,  বিপাকে রাজ্যের বহু  সরকারি হাসপাতাল

ঘটনাচক্রে তাঁর এই বক্তব্যের অনতি পরে অর্থ দফতর ৭৮ কোটির মধ্যে ৬৯ কোটি টাকা অনুমোদন করে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২২ ০৮:৩৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

ওষুধ হোক বা চিকিৎসাসামগ্রী কিংবা অন্য কিছুই কি ‘ছায়া টাকা’য় মেলে? অর্থের জোগানদার যে-হেতু সরকার, তাই কিছু কিছু লেনদেন হয়তো চলে। কিন্তু সেটা কত দূর পর্যন্ত? প্রশ্নটা তীব্রতর হয়েছে। কারণ, ওষুধের পরে এ বার ‘শ্যাডো ফান্ড’ বা ‘ছায়া টাকা’য় প্রয়োজনীয় চিকিৎসাদ্রব্য কিনতে গিয়ে চরম সঙ্কটে পড়েছেন রাজ্যের অধিকাংশ সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

আসলে ছায়া টাকার মায়ায় আর ভুলতে চাইছেন না চিকিৎসাসামগ্রীর সরবরাহকারীরা। ছায়া টাকায় তাঁরা দেখছেন সিঁদুরে মেঘ। তাঁদের অভিযোগ, অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন, ছায়া টাকা বছরের পর বছর ছায়াও নয়, বায়বীয় হয়ে থাকছে। বাস্তবে তাঁদের হাতে সেই টাকা এসে আর পৌঁছচ্ছেই না। তাই বিপুল বকেয়া হাতে আসার আগে তাঁদের পক্ষে চিকিৎসাসামগ্রী জোগান দেওয়া সম্ভব নয়।

পরিণামে ভুগতে
হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। চিকিৎসাসামগ্রীর অভাবে গুরুতর অসুস্থ রোগী প্রত্যাখ্যান বা রেফারের প্রবণতা বাড়ছে। অস্ত্রোপচারের তারিখ পেতে হন্যে হয়ে ঘুরতে হচ্ছে রোগী এবং তাঁর স্বজনদের। শুধু তা-ই নয়, সরকারি হাসপাতালের অনেক রোগীকে বাইরে থেকে দাম দিয়ে চিকিৎসাসামগ্রী কিনতে হচ্ছে
বলে অভিযোগ।

Advertisement

সরকারও কিছুতেই ‘শ্যাডো ফান্ড’-এর অভ্যাস থেকে বেরোতে চাইছে না। চলতি অর্থবর্ষ শেষের মুখে ফেব্রুয়ারি-মার্চে চিকিৎসাসামগ্রীর জন্য যে-টাকা দেওয়া হয়েছে, সেটাও ‘শ্যাডো!’ অনেক মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা রিজ়ার্ভ স্টোরের ক্ষেত্রে সেই ছায়া টাকার পরিমাণও অত্যন্ত কম। মাত্র ১০-২০ লক্ষ টাকা। ফলে বিভিন্ন হাসপাতালে লিগামেন্ট, শিরদাঁড়ার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয় সামগ্রী, স্টেন্ট, উন্নত মানের পেসমেকার, ক্যাথিটার, উন্নত মানের সুতো, গ্লাভস, সিরিঞ্জ, লেন্সের মতো বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রীর আকাল দেখা দিয়েছে।

‘শ্যাডো ফান্ড’-এর ক্ষেত্রে সরকার লিখিত ভাবে হাসপাতাল বা জেলা রিজ়ার্ভ স্টোরের জন্য টাকা অনুমোদন করে। কিন্তু সেই টাকা বাস্তবে হাতে দেওয়া হয় না। টাকা পেয়েছেন, এটা মনে মনে ধরে নিয়ে সন্তুষ্ট থেকেই ভেন্ডারকে জিনিস সরবরাহ
করতে হয়। তার পরে সত্যি টাকা হাতে পেতে অপেক্ষা করতে হয় তীর্থের কাকের মতো। এ ভাবে ২০১৭-২২ পর্যন্ত চিকিৎসাসামগ্রী খাতে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে সরবরাহকারীদের বকেয়া হয়েছিল ৭৮ কোটি টাকারও বেশি। সেই টাকার ফাইল বিভিন্ন দফতর ঘুরে আটকে ছিল
অর্থ দফতরে।

স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম মঙ্গলবার বলেন, ‘‘প্রতি বছর স্বাস্থ্য দফতর ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী কিনতে কয়েক হাজার
কোটি টাকা খরচ করে। তা হলে ওই ৭৮ কোটি টাকা কেন এত বছর ধরে দেওয়া হল না, সেটা তো ভাবতে হবে। নিশ্চয়ই সেখানে কোনও অন্য সমস্যা আছে, যে-কারণে আটকে
আছে টাকা।’’

ঘটনাচক্রে তাঁর এই বক্তব্যের অনতি পরে অর্থ দফতর ৭৮ কোটির মধ্যে ৬৯ কোটি টাকা অনুমোদন করে। যদিও সেই টাকা ভেন্ডারেরা কবে হাতে পাবেন, কেউ জানে না। চিকিৎসাসামগ্রী কেনার জন্য ফেব্রুয়ারিতে মোট ১৪ কোটি টাকা এবং মার্চে মোট ১৫ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার শ্যাডো ফান্ড বিভিন্ন হাসপাতালকে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

শ্যাডো ফান্ড প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ‘‘গত ১০ বছর এই নীতিতেই আমাদের কাজ হয়ে আসছে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে সেই টাকা দিয়েও দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা অর্থ দফতর থেকে বিশেষ ফান্ড চেয়েছি।’’ ভেন্ডারদের বক্তব্য, বছর দশেক আগেও তাঁরা নিয়মিত টাকা পেতেন। সামগ্রী সরবরাহকারী এক সংস্থার মুখপাত্র বলেন, ‘‘২০১৯ থেকে আমাদের সাড়ে চার কোটি টাকা বকেয়া পড়ে গিয়েছে। তার উপরে হাতে টাকা না-দিয়ে শুধু শ্যাডো ফান্ড দিচ্ছে। পাওনা না-মেটালে কত দিন এ ভাবে জিনিস দেব? কেনই বা দেব?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement