করোনা রোগী রেফারে এ বার নয়া বিধি। —ফাইল চিত্র
করোনা চিকিৎসায় বার বার হয়রানির ছবি ফুটে উঠছে কলকাতায়। কখনও হাসপাতালে বেড মিলছে না, কখনও আবার অ্যাম্বুল্যান্সের জন্যে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগী এবং তাঁর পরিবারকে। এমনকি মৃত্যুর পরেও ঘন্টার পর ঘণ্টা বাড়িতে দেহ পড়ে থাকার অভিযোগও উঠছে। এই আবহে মঙ্গলবার কলকাতা পুরসভায় একটি উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকে বসেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী, কলকাতা পুলিশের স্পেশাল কমিশনার জাভেদ শামিম, পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান অতীন ঘোষ এবং ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক শান্তনু সেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, রোগী হয়রানি থেকে অ্যাম্বুল্যান্স-দুর্ভোগ রুখতে এ বার স্বাস্থ্য দফতর, কলকাতা পুরসভা এবং পুলিশ সমন্বয় রেখে কাজ করবে। পাশাপাশি, কোভিড হাসপাতালে রোগীর জন্য বেড সুনিশ্চিত না করে রেফার করা যাবে না। যদি নার্সিংহোম বা হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন কারও করোনা ধরা পড়ে, ওই হাসপাতাল বা নার্সিংহোমকে এ বিষয়টি দেখতে হবে। স্বাস্থ্য ভবন এবং পুরসভার সঙ্গে কথা বলে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করতে হবে তাদেরকে।
কিছু দিন আগেই পার্ক সার্কাস থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে যাওয়ার জন্য প্রায় ন’হাজার টাকা দাবি করেছিলেন এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক। দাবি মতো টাকা দিতে না পারায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত শিশু, তার দাদা এবং মাকে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। একই রকম অভিযোগ ওঠে মোমিনপুরের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে রুবির অন্য একটি হাসপাতালে রোগী ভর্তির সময়। পরিবারের কাছে চাওয়া হয় ৬ হাজার টাকা। সেখানে যদি রোগী ভর্তি না নেয়, অন্য হাসপাতালে যেতে আরও ৫ হাজার। এবং ওয়েটিং চার্জ হিসাবে আরও ২ হাজার টাকা চাওয়া হয়।
হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়েও একই রকম সমস্যা হচ্ছে। সরকারি থেকে বেসরকারি হাসপাতালেই একই রকম দুর্ভোগের ছবি ধরা পড়ছে। শুনতে হচ্ছে, হাসপাতালে বেড নেই। কিছু দিন আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নলপুরের বাসিন্দা এক যুবক এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। যুবকের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর পর তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। মেডিক্যাল কলেজে রেফারের পর ভর্তিতে সমস্যা হচ্ছিল। অ্যাম্বুল্যান্সেই দীর্ঘ ক্ষণ পড়ে থাকতে হয়। এই ‘রেফার রোগ’-এর শিকার হয়েছিলেন এক প্রসূতি। ১১ জুলাই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা এসএসকেএম হাসপাতালে রেফার করা হয়। পরে মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়। দীর্ঘ ক্ষণ পরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।
আরও পড়ুন: তারাপীঠ থেকে কালীঘাট, অনলাইনে পুজোর নামে প্রতারণার নয়া ফাঁদ
এই সব অভিযোগ যখন প্রকাশ্যে আসছে তখনই উদ্যোগী হয় প্রশাসন। এ দিন শান্তনু সেন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন করোনা মোকাবিলায় আমরা বৈঠক করি। অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে চড়া ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠছে। স্বাস্থ্যভবন অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যে তার সংখ্যা ১১০ হয়ে যাবে। পুরসভাও অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। ওদেরও ৩০টা হয়ে যাবে। স্বাস্থ্যভবনে ফোন করলেই ব্যবস্থা হয়ে যাবে। জিপিএস ট্রাকিংয়েরও ব্যবস্থা করা হবে।”
আরও পড়ুন: কাজ নেই, ইদ যেতেই ফের ভিনরাজ্যের পথে পরিযায়ী শ্রমিকরা
অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দিষ্ট নম্বর (১৮০০৩১৩৪৪৪২২২) এবং কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোলরুম (০৩৩-২২৮৬ ১২১২/১৩১৩/১৪১৪) নম্বরে যোগাযোগ করা যেতে পারে। কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে এ দিন বৈঠক করেন কোভিড সংক্রান্ত গ্লোবাল অ্যাডভাইজারি বোর্ডের সদস্য চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী। কী ভাবে আগামী দিনে করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করতে হবে, স্বাস্থ্যকর্মীদের সামনে বিভিন্ন পরামর্শ দেন তিনি।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)