আদালত চত্বরে প্রতিবাদ আয়াদের—নিজস্ব চিত্র।
গ্রেফতারের আড়াই দিন পরে, বুধবার সকালে, মুর্শিদাবাদ মে়ডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে ধৃত অমল গুপ্ত ওরফে পল্টুকে আদালতে পেশ করল সিআইডি।
তাঁকে সাত দিন সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুর্শিদাবাদের ভারপ্রাপ্ত সিজেএম ইন্দ্রজিৎ দেব। সিআইডি-র তরফে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে চাওয়া হলেও সিআইডি-র সেই আবেদনে সাড়া দেননি বিচারক।
এ দিন সিআইডি-র পক্ষে সওয়াল করতে উঠে আইনজীবী বিশ্বপতি সরকার দাবি করেন—১৬১ ধারায় পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে অগ্নিকাণ্ডের দায় স্বীকার করে নিয়েছে ওই কংগ্রেস নেতা। তাই তদন্তের সুবিধার জন্য অন্তত ১৪ দিনের পুলিশি হেপাজত দেওয়া হোক। তাতে অবশ্য আমল দেননি বিচারক।
হাসপাতালে আগুন লাগার রাতেই, বহরমপুর এসে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী শুনিয়ে গিয়েছিলেন— ওই অগ্নিকাণ্ডে নিছক দুর্ঘটনা নয়। জানিয়ে গিয়েছিলেন ‘অন্য কিছু’র আঁচ পাচ্ছেন তিনি।
রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্যপ্রতিন্ত্রী চন্দিরমা ভট্টচার্য আরও এক ধাপ এগিয়ে খাড়া করে গিয়েছিলেন ‘ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব’।
হাসপাতালে দুর্ঘটনায় জখম দুই ছাত্রী।
পরের দিন মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়ে দিয়েছিলেন, আগুন ‘ইচ্ছাকৃত’ বাবেই লাগানো হয়েছে। কংগ্রেসের দাবি সিআইডি-র তদন্তের অভিমুখ তখনই নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল!
রাতেই আটক করা হয়েছিল কংগ্রসের রোগী সহায়তা কেন্দ্রের তত্বাবধানে থাকা অমলবাবুকে। পরে তাঁকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
তবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় অমলকে মুর্শিদাবাদ মে়ডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মঙ্গলবার রাতে তাকে গ্রেফতার করে পাঠানো হয় লালবাগ থানায়।
বুধবার সকালে সেখান থেকেই বহরমপুর আদালতে হাজির করানোর হয়।
তবে, প্রিজন ভ্যানে তাঁকে আনার সময়ে নতুনগ্রাম এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়ে পুলিশের গাড়িটি। ধাক্কা মারে দুই ছাত্রীকে। নতুনগ্রাম হাইস্কুলের আহত ওই দুই ছাত্রী— নবম শ্রেণির আশা খাতুন ও অষ্টম শ্রেণির নুরজেমা খাতুনকে গুরুতর জখম অবস্থায় ভর্তি করানো হয়েছে মুর্শিদাবাদ মে়ডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
অমলকে নিয়ে হাসপাতালে পুলিশের গাড়ি ঢুকতেই আয়া ও অনুব্রতীরা ওই কংগ্রেস নেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আদালত চত্বরে হইচই বাঁধিয়ে দেন।
আদালতে, সরকার পক্ষের বক্তব্য ণ্ডনে অমলবাবুর আইনজীবী কাঞ্চনলাল মুখোপাধ্যায় জানান— অমল নিতান্তই সমাজসেবী। দু’দশক ধরে স্বেচ্ছায় বহু রোগীর উপকার করেছেন। তবুও তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
আদালতের পথে অমল গুপ্ত।— নিজস্ব চিত্র
অন্য এক আইনজীবী পীযূষ ঘোষ বলেন, ‘‘আগুন লাগার সময়ে আপৎকালীন সব পথই বন্ধ ছিল। আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থাও ছিল না হাসপাতালে। অথচ অগ্নিকাণ্ডের জন্য চিকিৎসক, নার্স, ইলেক্ট্রিশিয়ান কাউকে গ্রেফতার না করে, বাছা হল অমলবাবুকে।’’
ওই অগ্নিকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে এ দিন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জয়প্রকাশ নাড্ডার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সবাপতি অধীর চৌধুরী। অন্য দিকে এ দিন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করার পর ‘সেভ ডেমোক্রেসি’র রাজ্য সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সিআইডি-র দু’দিনের তদন্তে বেরিয়ে আসা ‘চক্রান্ত’-এর তত্ত্ব গ্রহণযোগ্য নয়। ওই তদন্ত নিরপেক্ষও নয়। হাইকেোর্ট, অথবা সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে বিচারর বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’’