করোনাভাইরাসের আতঙ্কে বিশ্বভারতীতে এ বার দেখা যাবে না এই পরিচিত দৃশ্য। —ফাইল চিত্র।
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে দোলের দিন বসন্তোৎসব হচ্ছে না বলে জানিয়ে দিল বিশ্বভারতী।
বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তরফে চিঠি দিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কে বড় কোনও জমায়েত এড়িয়ে চলতে নির্দেশ দেওয়া হয়। শুক্রবার বৈঠকে বসে বিশ্বভারতীর কর্মসমিতি। চার ঘণ্টা বৈঠকের পর কর্মসমিতির সদস্য সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার জানিয়ে দেন, দোলের দিন বসন্তোৎসব হচ্ছে না। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের চিঠি সামনে রেখে সুশোভনবাবু বলেন, “রাজ্য সরকার ও বিশ্বভারতী খুবই চেষ্টা করেছিল সুষ্ঠু বসন্তোৎসব উপহার দিতে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মাথায় রেখে কেউই দায়িত্ব নিতে চাননি। তাই এ বছর বিশ্বভারতীতে কোনও জনসমাগম যাতে না হয়, সে জন্য বসন্তোৎসব বাতিল করা হল।” ভাইরাসের প্রকোপ কমে পরিস্থিতির উন্নতি হলে বসন্তোৎসব আয়োজনের চেষ্টা হবে বলে তাঁরা জানান।
করোনাভাইরাসের আতঙ্ক কিছুদিন ধরেই জাঁকিয়ে বসেছিল বিশ্বভারতীতে। সম্প্রতি বিশ্বভারতীর চিনা ভবনও চিনের ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিনিধিদলের সফর বাতিল করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ক’দিন আগে টুইট করে জানিয়েছেন করোনাভাইরাস-উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তিনি হোলি উৎসবে যোগ দিচ্ছেন না। এরপরেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ওই চিঠি আসে। ইউজিসির সেক্রেটারি রজনীশ জৈনের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয় ক্যাম্পাসে যে কোনও জমায়েত এড়িয়ে চলতে হবে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ রয়েছে এমন দেশ থেকে গত ২৮ দিনে কোনও পড়ুয়া বা কর্মী এলে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। পড়ুয়াদের মধ্যে ভাইরাস আক্রান্তের কোনও উপসর্গ দেখা দিলে কী করণীয় সে সবও বলা হয়।
আরও পড়ুন: সব সরকারি ফর্ম থেকেই বাদ বিতর্কিত অংশ ও শর্ত
আয়োজন: বসন্তোৎসবের মঞ্চ। শুক্রবার কাজের তোড়জোড় চোখে পড়েনি। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ আসেন বসন্তোৎসবে। তার মধ্যে অন্তত এক হাজার বিদেশি পর্যটক যোগ দেন। তাঁদের প্রত্যেকে কোন দেশ থেকে এসেছেন তা চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা কার্যত অসম্ভব। তাই বিশ্বভারতীর ইতিহাসে নজিরবিহীন হলেও এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছেন অনেকেই। প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, "আমার জ্ঞানত বিশ্বভারতীতে কখনও বসন্তোৎসব বাতিল হয়নি। তবে করোনাভাইরাসের এই প্রকোপের সময় জনসমাগম না হওয়াই ভাল। বিশ্বভারতী সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’ তবে বসন্তোৎসব স্থগিত হওয়ায় কয়েক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হবে বলে জানিয়ে বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিংহ বলেন, ‘‘যে বিপুল আয়োজন আমরা করেছিলাম, সেই ক্ষতি পূরণ করা অত্যন্ত কঠিন। তবে, সাধারণের স্বাস্থ্যের স্বার্থে আমরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।’’