গোপালকৃষ্ণ গান্ধী এবং সুগত বসু ফাইল চিত্র।
একটা কথা আমি জোর গলায় অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে বলতে চাই, বলছিলেন মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর পৌত্র গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। “১৯৩৯এ ত্রিপুরী কংগ্রেসে সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে অবিচার হয়েছিল। এবং ভারতের ইতিহাসের গতিপথ বিচার করে যা মনে হয়, নেতাজির মতো সর্বজনগ্রাহ্য নেতার সঙ্গে ঘটা ঘটনাবলি ভারতের প্রতিও এক ধরনের অবিচার ছিল”, বললেন গান্ধীর পৌত্র।
আর সুভাষচন্দ্র বসুর ভ্রাতুষ্পুত্র পুত্র সুগত বসু বললেন, “গান্ধী ও নেতাজির জীবনপথে ১৯৩৯এর ঘটনাবলি একটা প্রক্ষিপ্ত অংশ। গান্ধীকে সুভাষই প্রথম ‘জাতির জনক’ আখ্যা দেন। ১৯৪১-৪৫ আজাদ হিন্দ ফৌজের. সর্বাধিনায়ক নেতাজির সব বক্তৃতাই গান্ধীর বিষয়ে শ্রদ্ধায় ভরপুর। আর ১৯৪৬-৪৮ গান্ধীর যে কোনও বক্তৃতাই সুভাষ-প্রসঙ্গে প্রশস্তি বাক্যে ভরপুর।” মৌলবাদী হিন্দু আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার সাত দিন আগেও দাঙ্গাধস্ত দেশে সুভাষচন্দ্র বসুর নামেই সব সাম্প্রদায়িক তিক্ততা মুছতে বলছেন গান্ধী।
শুক্রবার সন্ধ্যায় 'দ্য মহাত্মা অ্যান্ড নেতাজি ইন টুডেজ ওয়র্ল্ড’-শীর্ষক ভার্চুয়াল আলাপচারিতায় বসেছিলেন দু’জনে, ইতিহাসবিদ, প্রাক্তন সাংসদ সুগত বসু এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল, অবসরপ্রাপ্ত আমলা, সুলেখক গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। যদি, কিন্তু নিয়ে বাড়াবাড়ি পছন্দ করেন না ইতিহাসবিদেরা। তবু কয়েকটি সম্ভাবনার সামনে বার বার থমকে গেলেন দুই বিদগ্ধ চিন্তাবিদ।১৯৪৭এর ১৫ অগস্টে বেলেঘাটায় ভগ্ন হৃদয়ে পড়ে থাকা গান্ধীজির পাশে যদি তাঁর ‘বিদ্রোহী সন্তান’ সুভাষ থাকতেন, তবে কী হতে পারত…
মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর পৌত্র গোপালকৃষ্ণ গান্ধী প্রত্যয়ী স্বরে বললেন, “আমি নিশ্চিত নেতাজি সেদিন থাকলে ধর্মের নামে নানা গুন্ডামি থেমে যেত। সুভাষচন্দ্র যে ভাবে এ দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হৃদয় জিতে নিয়েছিলেন, তাতে হিন্দু, মুসলিম সম্পর্ক অবশ্যই তখন এ দেশে উন্নততর হতো, কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের দূরত্বের প্রভাবও অনেক কমত সেদিনের ভারতে। বহুত্বের বাণীর ফলিত প্রয়োগে রবীন্দ্রনাথের ‘আগুনের পরশমণি’র মতো নেতাজি তখনও ভারতের আত্মাকে স্পর্শ করতেন।” সুভাষচন্দ্রের ভ্রাতুষ্পুত্র পুত্র সুগত বসু বলছিলেন, তাঁর ছোটবেলায় বাড়িতে মা, বাবার মধ্যে গান্ধীভক্তির আবহের কথা। গোপালকৃষ্ণের মতে, সুভাষ, গান্ধী বা নেলসন ম্যান্ডেলা তিনজনই তিনটি ডি, ডিসগ্রেস (অপমান), ডিফিট ( পরাজয়), ডেথ (মৃত্যু) -এর সামনে অকুতোভয়। সুগতের মতে, “গান্ধী ও সুভাষ মিলিয়েই স্বাধীনতা। সংখ্যাগুরুবাদ ও গণতন্ত্রের পার্থক্যটা ওঁরা দু’জনেই বুঝতেন। যে কোনও অন্যায়, অবিচারের প্রতিরোধে গান্ধী, সুভাষের আদর্শ এখন আরও অনেক বেশি করে দরকার।”