রাজপথে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।—ফাইল চিত্র।
সিএএ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে মহিলারা এবং যুব সমাজ যে-ভাবে আন্দোলনে নেমেছেন, ইতিহাসবিদদের একাংশ তাতে আশান্বিত। তাঁদের মতে, এই আন্দোলনকে যথাযথ নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ইতিহাসবিদ সুগত বসু বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনস্টিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিজ়ে বলেন, ‘‘আন্দোলনকারীদের অভিনন্দন। দেখে ভাল লাগছে, যুব সমাজ সংবিধান হাতে এগিয়ে আসছে।’’ তিনি জানান, ব্রিটিশ আমলের ১৯৩৫-এর আইন থেকে কিছু ধারা সংবিধানে রয়ে গিয়েছে। খেয়াল রাখতে হবে, ওই সব ধারার অপব্যবহার করে কেন্দ্র যেন এই আন্দোলনে আঘাত হানতে না-পারে। দেশ জুড়ে আন্দোলনকে দীর্ঘস্থায়ী ও সংহত করতে প্রকৃত রাজনৈতিক বিকল্পের প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘‘এ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রতিবাদ হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে কাশ্মীরবাসীদের দাবিয়ে রাখা হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে যোগী-রাজত্বে চলছে অত্যাচার। এ-সবের বিরুদ্ধে শক্তিশালী রাজনৈতিক বিকল্প প্রয়োজন। সেই বিকল্পই সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠদের উল্টে দিতে পারবে।’’
এ দিন নেতাজি ইনস্টিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিজ়ে ‘বার্ষিক নেতাজি বক্তৃতা’ দেন ইতিহাসবিদ এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন ডিন আদিত্য মুখোপাধ্যায়। জোসেফ স্ট্যানলির ‘হাউ ফ্যাসিজ়ম ওয়ার্কস: দ্য পলিটিক্স অব আস অ্যান্ড দেম’ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে ফ্যাসিবাদের লক্ষণগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে কী ভাবে রয়েছে, তা ব্যাখ্যা করেন তিনি। এর অন্যতম লক্ষণ পৌরাণিক অতীত নিয়ে প্রচার। অর্জুনের তিরে পরমাণু শক্তি ছিল বলে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় যে-মন্তব্য করেছেন, সেই প্রসঙ্গ তোলেন আদিত্যবাবু। তাঁর পর্যবেক্ষণ, দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র নষ্ট করার চেষ্টা রুখতে আশার আলো দেখাচ্ছে মহিলা ও যুব সমাজ। তেমন কোনও বড় নেতা নেই এই আন্দোলনের।
ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র রক্ষায় গাঁধী-নেহরুর ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আদিত্যবাবু জানান, এ দেশে সাম্প্রদায়িকতার সমস্যা ছিলই। তাকে সে-ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এখন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য রক্ষায় সংবিধান হাতে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নেমেছেন। এটা খুবই আশাপ্রদ ঘটনা।
আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় যে-ভাবে দেশদ্রোহী, টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং, শহুরে নকশাল বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে, যে-ভাবে আক্রমণ নেমে আসছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিশিষ্টজনদের উপরে, সেই প্রসঙ্গও তোলেন আদিত্যবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আমার মতো ‘দেশদ্রোহী’-কে এই বক্তৃতা দিতে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং নেতাজি ইনস্টিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিজ়ের অবৈতনিক অধিকর্তা সুরঞ্জন দাস।