Hiran Chatterjee

Hiran Chatterjee: গরুর দুধে সোনা না খুঁজে যুবকদের উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা জরুরি, দিলীপকে হিরণ-খোঁচা

দিলীপ ও হিরণের সম্পর্ক যে আদায়-কাঁচকলায় তা রাজ্য বিজেপি-র সীমা ছাড়িয়ে রাজ্য রাজনীতির কারবারিদের জানা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:৪০
Share:

হিরণ চট্টোপাধ্যায়।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে গরুর দুধে সোনার ‘খোঁজ’ দিয়েছিলেন বিজেপি-র তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিধায়ক দিলীপ তখন সবেই সাংসদ হয়েছেন। এখন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হয়ে যাওয়ার পরেও গরু ও সোনার ‘গুঁতো’ থেকে বাঁচতে পারছেন না দিলীপ। বিরোধীরা তো সুযোগ পেলেই গুঁতো দেন এ বার দিলীপের দলের বিধায়কই দিলেন খোঁচা। তিনি আবার দিলীপের ফেলে আসা বিধানসভা খড়্গপুর সদরের অভিনেতা-বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়। শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনের ‘অ-জানাকথা’য় নিজের কাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে হিরণ বলেন, “গরুর দুধে সোনা আছে কি না তা নিয়ে গবেষণার আগে যুব সমাজের কী করে উন্নয়ন হবে, তাঁরা কী করে কাজ পাবেন সেটা নিয়ে গবেষণা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।”

Advertisement

দিলীপ ও হিরণের সম্পর্ক যে আদায়-কাঁচকলায় তা রাজ্য বিজেপি-র সীমা ছাড়িয়ে রাজ্য রাজনীতির কারবারিদের জানা। অনেক দিন আগেই দিলীপের সঙ্গে মুখ দেখাদেখি বন্ধ করা হিরণের সঙ্ঘাত ক'দিন আগেই সামনে এসেছে। হিরণের বিধানসভা এলাকা দিলীপের লোকসভা‌ মেদিনীপুরেরই অঙ্গ। সেই সূত্রে সম্প্রতি খড়্গপুরে পুরসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি বৈঠক করেন দিলীপ। তাতে যোগ দেননি হিরণ। পরে কয়েকটি দলীয় হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যান। সম্প্রতি বিজেপি-র মতুয়া বিধায়ক, বাঁকুড়ার বিধায়ক এবং পরে বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ ছাড়া নিয়ে যখন গেরুয়া শিবির অস্বস্তিতে তখনই হিরণ একাধিক গ্রুপ ছাড়েন। সেই প্রসঙ্গে শনিবার হিরণ বলেন, “আমি অনেক গ্রুপে রয়েছি। ওই গ্রুপগুলিতে আমার থাকার দরকার নেই মনে করেই ছেড়েছি। দল বললে আবার ঢুকে যাব।”

গ্রুপ ছাড়ার সঙ্গে দল ছাড়ার কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করলেও শনিবার বার বার হিরণের কথায় ক্ষোভের ইঙ্গিত মেলে। তবে কি দিলীপের সঙ্গ বনিবনা হচ্ছে না? হিরণ বলেন যে, “দিলীপবাবু তো আমাদের সাংসদ। দল বললে উনি কর্মসূচি করবেনই। কিন্তু রাজ্য সভাপতি থেকে নেতৃত্বের সকলকে বলেছিলাম, আমার এলাকায় কোনও কর্মসূচি থাকলে আমায় যেন আগে জানানো হয়।”

Advertisement

দিলীপের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সমস্যা নেই দাবি করে হিরণ আরও বলেন, “ব্যক্তির সঙ্গে আমার কোনও সমস্যা নেই। আলোচনা করে ঠিক হোক। আমি পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে জেতা বিজেপি-র একমাত্র বিধায়ক। আমি বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে কলকাতায় অথচ আমার অজ্ঞাতেই খড়্গপুর পুরভোটের প্রস্তুতি বৈঠক হয়ে গেলে সেটা তো মেনে নেওয়া যায় না।”

রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে এমন মতবিরোধ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে কখনও নালিশ জানাননি? হিরণ জানান, তাঁকে প্রশ্ন না করা হলে তিনি বলবেন না। বিধানসভা নির্বাচনের আগে অমিত শাহের হাত থেকে পতাকা নিয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে আসা হিরণ বলেন, "অমিত শাহ তথা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আমায় যা যা কথা দিয়েছিলেন সবই রেখেছেন। অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদী খড়্গপুরে এসে জনসভা করেছেন। তাঁদের সঙ্গে আমার কোনও সমস্যা নেই।"

তবে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী বা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে তিনি বার বার নালিশ জানিয়েছেন বলেও দাবি করেন হিরণ।

হিরণের স‌াম্প্রতিক অবস্থান ঘিরে জনমানসে তাঁর রাজনৈতিক দলবদল নিয়েও অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এমন নানা প্রশ্ন ওঠে আনন্দবাজার অনলাইনের দর্শকদের তরফে। তার জবাবে, তিনি দলবদল করবেন না বলে ঘোষণা করলেও হিরণ জানান, রংবদল‌ নিয়ে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। তাঁর বক্তব্য, সাধারণ মানুষও তো নিজেদের মতামত বদলে সরকার বদলান। পেশাজীবী, চাকরিজীবীরাও কাজের জায়গা বদলান। তবে রাজনীতিকদের দোষ কোথায়? একই সঙ্গে তাঁর দাবি, রাজনৈতিক রং নয়, রাজনীতি করতে হবে কোনটা ঠিক ভেবে। প্রান্তিক মানুষদের উন্নয়নের কথা ভেবে।

সেই প্রসঙ্গেই হিরণ নিজের কথা তুলে ধরেন। জানান, বিধায়ক হওয়ার পরে তিনি নিজের এলাকার উন্নয়নে কী কী উদ্যোগ নিয়েছেন। একই সঙ্গে দাবি করেন, গত ৭৫ বছরে খড়্গপুর সদর তাঁর মতো বিধায়ক বা সাংসদ পায়নি। তবে কি তাঁর পূর্বসূরি তথা মেদিনীপুরের বর্তমান সাংসদ দিলীপকেই খোঁচা হিরণের? সে উত্তর অভিনেতা বিধায়ক এড়িয়ে গেলেও দিলীপের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বুঝিয়ে দেন আচমকা তিন বছর আগের কথা তুলে।

২০১৯ সালে বর্ধমান শহরের টাউনহলে ‘ঘোষ এবং গাভীকল্যাণ সমিতি’র সভায় বলেছিলেন, ‘‘গরুর দুধে সোনার ভাগ থাকে। তাই দুধের রং হলুদ হয়।’’ এমন ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন যে, ‘‘দেশি গরুর কুঁজের মধ্যে স্বর্ণনাড়ি থাকে। সূর্যের আলো পড়লে, সেখান থেকে সোনা তৈরি হয়।’’ দিলীপের সেই ‘তত্ত্ব’ শুনে বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞদের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গিয়েছিল। তার প্রভাব পড়েছিল নেটমাধ্যমেও। রসিক মন্তব্য থেকে ‘মিম’ আক্রমণে ভরে উঠেছিল নেটমাধ্যম। ‘দিলু পাতন প্রক্রিয়া’-সহ কটাক্ষ-শ্লেষে ভরা নানা পোস্ট ছেয়ে যায়, ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো যাবতীয় নেটমাধ্যমে। ব্যঙ্গবিদ্রুপের বন্যা রুখতে দেড় দশক আগে পোল্যান্ডের একটি পরিবেশ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র সামনে আনেন দিলীপ। তাতেও রক্ষা পাননি তিনি।

তিন বছর আগের শীতের কথা ২০২২-এর শীতে নিজে থেকেই টেনে এনে হিরণ যেন বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, তিনি আর দিলীপে অনেক ফারাক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement