ফাইল চিত্র।
পরীক্ষা সম্পূর্ণ করতে দেয়নি অতিমারি করোনা। তবু পাশের হার থেকে সর্বাধিক নম্বর— সব ক্ষেত্রেই রেকর্ড গড়ল এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক।
গত বছর উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হার ছিল ৮৬.২৯%। এ বার সেটা প্রায় চার শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৯০.১৩%। মোট ৫০০-র মধ্যে গত বার সর্বাধিক নম্বর উঠেছিল ৪৯৮। এ বছর ৪৯৯। এ বার বিজ্ঞানে পাশের হার ৯৮.৮৩%। বাণিজ্যে ৯২.২২%। কলা বিভাগে ৮৮.৭৮%। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাসের ভাষায়, এ বছরের ফল ‘ঐতিহাসিক’।
মোট ৫০০-র থেকে মাত্র এক নম্বর কম পাওয়াটা নিশ্চয়ই ঐতিহাসিক। তবে ইতিহাস হয়ে থাকছে এ বার অপরীক্ষিত কিছু বিষয়ে নম্বর দেওয়ার পদ্ধতিটাও। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ১২ মার্চ শুরু হয়েছিল। ২১ মার্চের পরে অতিমারির দাপটে লকডাউনের জন্য বাকি তিন দিনের প্রায় ১৪টি বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। সংক্রমণের আশঙ্কায় সেই সব পরীক্ষা আর নেওয়াই হয়নি। পরীক্ষিত বিষয়গুলির মধ্যে পড়ুয়া যেটিতে সর্বাধিক নম্বর পেয়েছেন, অপরীক্ষিত বিষয়ে নম্বর দেওয়া হয়েছে তারই ভিত্তিতে। ফল নিয়ে প্রশ্ন বা সংশয় থাকলে সোমবার থেকে তাঁদের হেল্পলাইনে ফোন বা ই-মেলে মেল করতে বলেছেন সংসদ-প্রধান। হেল্পলাইন: ৯৮৫১৯০৫৫২৯। ফোন করা যাবে বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ই-মেল: resultinfo2020@gmail.com।
শুক্রবার ফলাফল দেখতে গিয়ে ওয়েবসাইটের সার্ভার-বিভ্রাটে হোঁচট খেতে হয় পরীক্ষার্থীদের। মহুয়াদেবী বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ আনুষ্ঠানিক ভাবে ফল প্রকাশ করার পরে সার্ভার-সমস্যায় ফল দেখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত সার্ভার বদলের বেশ কিছু ক্ষণ পরে ফল দেখা যায়। কিন্তু অনেকেরই সব বিষয়ের নম্বর আসছিল না। কারও কারও একটি বিষয়ের নম্বর আসছিল বার বার। সার্ভার বদলের পরে অবশ্য এই সমস্যা মিটে যায়।
আরও পড়ুন: ৪৯৯ পেয়ে শীর্ষে চার, জেলার পাশে স্বমহিমায় কলকাতাও
করোনার প্রাদুর্ভাবে সব পরীক্ষা না-হওয়ায় এ বার উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা-তালিকা প্রকাশ করা হবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছিলেন। মহুয়াদেবীও এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে জানান, মেধা-তালিকা দেওয়া হচ্ছে না। তবে সর্বাধিক নম্বর উঠেছে ৪৯৯। তাঁর এই ঘোষণার কিছু পরেই সংসদ সূত্রে জানা যায়, ৪৯৯ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন চার জন। কলকাতার সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের স্রোতশ্রী রায়, বাঁকুড়ার বড়জোড়া হাইস্কুলের গৌরব মণ্ডল ও কেন্দুয়াডিহি হাইস্কুলের অর্পণ মণ্ডল এবং হুগলি কলেজিয়েট স্কুলের ঐক্য বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪৯৮ পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন ন’জন। ৪৯৭ নম্বর পেয়ে ১৫ জন আছেন তৃতীয় স্থানে। সংসদের খবর, গত বার প্রথম দশে ঠাঁই হয়েছিল ১৩৭ জনের। এ বার প্রথম ছ’টি স্থানেই আছেন ১৩০ জন। তাঁদের মধ্যে ১৩ জন সরকারি স্কুলের পরীক্ষার্থী। সরকারি স্কুলের দু’জন ছাত্রছাত্রী সর্বাধিক নম্বর অর্থাৎ ৪৯৯ পেয়েছেন। ৩১ জুলাই বেলা ২টো থেকে মার্কশিট ও সার্টিফিকেট দেওয়া হবে সংসদের বিতরণ কেন্দ্রে।
এ বছর মাধ্যমিকে পাশের হারের নিরিখে শীর্ষে আছে পূর্ব মেদিনীপুর। কলকাতা তৃতীয়। তবে উচ্চ মাধ্যমিকে পূর্ব মেদিনীপুরকে পিছনে ফেলে দিয়েছে কলকাতা। গত বছর পাশের হারে সকলের আগে ছিল পূর্ব মেদিনীপুরই। মহুয়াদেবী জানান, এ বার ১১টি জেলায় পাশের হার ৯০ শতাংশের বেশি। সেই জেলাগুলি হল কলকাতা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, কালিম্পং, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ।
এ বার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৭,৬১,৫৮৩। পাশ করেছেন ৬,৮০,০৫৭ জন। ছাত্রদের থেকে ৬৩,১৬৪ জন বেশি ছাত্রী পরীক্ষা দেন। ৬০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেয়েছেন ৩২,২০৫৬ জন (গত বছরের থেকে ৫৮,৯০৭ বেশি)। ‘ও’ অর্থাৎ ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন ৩০,২২০ জন। গত বার সংখ্যাটা ছিল ৭৮১৮। ‘এ প্লাস’ অর্থাৎ ৮০ থেকে ৮৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন ৮৪,৭৪৬ জন। গত বার সংখ্যাটা ছিল ৪৭,৭৫৯। সংখ্যালঘুদের পাশের হার ৮৫.৭৬%। তফসিলি জাতি-জনজাতি সম্প্রদায়ের পাশের হার ৮৭.৪০%।
এ বার অপরীক্ষিত বিষয়ের মূল্যায়ন নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠছিল, বিতর্ক ছড়িয়েছিল। অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন, কেউ একটি বিষয়ে ১০০ পেয়ে বাকি বিষয়ে ৮৫ থেকে ৯০-এর মধ্যে পেলে তাঁর মোট নম্বর অনেক বেশি হয়ে যাবে। ফলে যাঁর প্রতিটি বিষয়ে ৯৫-৯৬ পাওয়ার কথা, তিনি পড়বেন পিছিয়ে। ভর্তির ক্ষেত্রেও প্রথম জনের পরে থাকতে হবে তাঁকে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই আশঙ্কা অনেক ক্ষেত্রেই সত্যি হয়েছে। এ ভাবে মূল্যায়নের ফলে ঢালাও নম্বর পেয়েছেন অনেকেই। কিছু পরীক্ষার্থী একটি বিষয়ে ১০০ পেয়ে যাওয়ায় তাঁর মোট নম্বর অনেক বেশি হয়ে গিয়েছে। স্রোতশ্রী অঙ্কে ১০০ পেয়েছেন, ফলে অপরীক্ষিত তিনটি বিষয়েও তাঁর নম্বর ১০০। স্রোতশ্রী অবশ্য জানান, সব পরীক্ষা দিতে পারলে নিশ্চয়ই আরও ভাল লাগত।