খিঁচুনি-মাথাব্যথা নিয়ে জ্বর ফিরল উত্তরবঙ্গে, মৃত ৮

রহস্যময়তা আর ভয়াবহতায় গত বার বাংলা কাঁপিয়ে দিয়েছিল সে। সেই রহস্যজনক খিঁচুনি-জ্বর ফের হানা দেওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ। বছর ঘুরতেই ফের সেখানে থাবা বসিয়েছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস এবং অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম বা এইএস।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৬
Share:

ফের এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ। শিলিগুড়ির ইস্টার্ন বাইপাস এলাকায় অবশ্য অবাধেই ঘুরছে শুয়োর। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

রহস্যময়তা আর ভয়াবহতায় গত বার বাংলা কাঁপিয়ে দিয়েছিল সে। সেই রহস্যজনক খিঁচুনি-জ্বর ফের হানা দেওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ। বছর ঘুরতেই ফের সেখানে থাবা বসিয়েছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস এবং অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম বা এইএস। এর মধ্যে রহস্য বেশি এইএসের। কারণ, ওই জ্বরের ক্ষেত্রে উপসর্গ এনসেফ্যালাইটিসের হলেও তার জীবাণু ধরা পড়ে না।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, গত দু’মাসে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গে আট জন মারা গিয়েছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তাঁদের মধ্যে তিন জনের রক্তের নমুনায় জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু ধরা পড়েছে। এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে মে মাসে। জুনে মারা গিয়েছেন দু’জন। ৬ জুলাই এক জন।

মূল উপসর্গ জ্বর, খিঁচুনি, মাথাব্যথা, মাঝেমধ্যে জ্ঞান হারানো, ঝিমুনি আর ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া। এই সব স্তরের পরেই কোমা। এমন উপসর্গ নিয়েই বিচিত্র রোগটি গত বছর উত্তরবঙ্গ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। সে-বার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অন্তত ১৬০ জনের মৃত্যু হয়। তা নিয়ে হইচই পড়ে যায় সারা রাজ্যে। তথ্য গোপন করার অভিযোগে ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার এবং জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে সাসপেন্ড করা হয়। পরে সাসপেন্ড হন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের তৎকালীন অধ্যক্ষও।

Advertisement

ওই অদ্ভুত জ্বর ঠেকাতে এ বার আগেভাগেই কিছু কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সম্ভাব্য জ্বর-পরিস্থিতির মোকাবিলায় মাসখানেক আগে উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের চারটি ব্লক, দার্জিলিং জেলার নকশালবাড়ি ও মাটিগাড়া ব্লক এবং জলপাইগুড়ির দু’টি ব্লকের অন্তত ১০ লক্ষ বয়স্ক বাসিন্দাকে এনসেফ্যালাইটিসের প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীরা আসছেন। অন্তত পাঁচ জন রোগী এখন ওই হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানান।

ওই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত সোমবার ভোরে সেখানে অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম (এইএস)-এ মারা গিয়েছেন বুধুয়া টুডু (৫৩) নামে এক প্রৌঢ়। তাঁর বাড়ি নকশালবাড়ির বিজয়নগর চা-বাগানে। ৩ জুলাই খিঁচুনি-জ্বর নিয়ে তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ১৫ জুন এইএস নিয়ে ওই হাসপাতালে মারা যান সুগ্রীব দর্জি (৩১) নামে কার্শিয়াঙের দুধিয়ার এক যুবক।

দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘এইএস নিয়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। রোগ ঠেকাতে আগাম ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। আর কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই ব্যাপারে দু’-এক দিনের মধ্যে ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং পূর্ত, জনস্বাস্থ্য, প্রাণিসম্পদ বিভাগের আধিকারিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকা হচ্ছে।’’

জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মির্ধা বলেন, ‘‘মৃতদের মধ্যে এক জনের রক্তের নমুনায় জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের ভাইরাস মিলেছে। বাকি দু’জন অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোমে আক্রান্ত।’’

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ভারপ্রাপ্ত সুপার নির্মল বেরা জানান, জাপানি এনসেফ্যালাইটিস এবং অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোমে কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে। এই মুহূর্তে হাসপাতালে জনা চারেক ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। ওই রোগীদের রক্ত পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় কিটও রয়েছে। ‘‘দু’তিন জন করে রোগী আসায় এ-পর্যন্ত তেমন কোনও সমস্যা হয়নি,’’ জানালেন ভারপ্রাপ্ত সুপার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement