ফাইল চিত্র।
রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের অ্যাকাউন্ট থেকে হেমতাবাদের বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যুর ঘটনায় কিছু টুইট করা হয়েছিল। সিআইডি তদন্তে কী মিলেছে, তা না দেখেই ওই সব টুইট করা হয়। আর তার ভিত্তিতেই বিধায়ক মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে বলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানাল।
রাজ্য পুলিশের সিআইডি আজ সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে দাবি করেছে, উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যু ‘রাজনৈতিক খুন’ নয়। এই ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগানো হয়নি। কোনও দুষ্কৃতীও জড়িত নয়। পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসা ও বিরোধী দলের বিরুদ্ধে দমনমূলক নীতির অভিযোগও উড়িয়ে দিয়ে রাজ্যের হলফনামা বলেছে, ‘ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগানো হচ্ছে, বা পুলিশের তদন্তে আস্থা রাখা অসম্ভব হয়ে উঠেছে, এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হচ্ছে।’’
গত বছর ১৩ জুলাই একটি বন্ধ দোকানের সামনে উদ্ধার হয় দেবেন্দ্রনাথ রায়ের হাত বাঁধা ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে তিনি কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন। ২০১৯-এ বিজেপিতে যোগ দেন। পুলিশ একে আত্মহত্যার ঘটনা বলে দাবি করেছিল। দেবেন্দ্রনাথের স্ত্রী চাঁদিমা সিবিআই তদন্তের আর্জি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। হাইকোর্ট তা খারিজ করে দেয়। রাজ্যের বিজেপি নেতারা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কাছে এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানান। এরপর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শশাঙ্কশেখর ঝা এবং গোয়ার সাংবাদিক স্যাভিও রডরিগজ় সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানান। শীর্ষ আদালত এ বিষয়ে রাজ্যের বক্তব্য জানতে চায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সুপ্রিম কোর্টে পাল্টা যুক্তি দিয়েছে, ‘যাচাই না করা বিবৃতি’-র উপরে ভিত্তি করে মামলা করা হয়েছে। প্রথমত, মৃতের স্ত্রী কিছু মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু তাঁরাও পুলিশ-প্রশাসনের দিকে আঙুল তোলেনি। দ্বিতীয়ত, ১৩ জুলাই ধনখড়ের অ্যাকাউন্ট থেকে এই মৃত্যুর বিষয়ে কিছু টুইটের উপরেও মামলাকারীরা ভরসা করেছেন। তাঁরা ভুল ধারণা করেছেন যে এই ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত। এর পিছনে পুলিশ-প্রশাসনের হাত রয়েছে। রাজ্যের বক্তব্য, রাজ্যের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও বিচারব্যবস্থার দিকে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলাটা গুরুতর বিষয়। কোনও ভিত্তি ছাড়া এ ধরনের অভিযোগ তোলা যায় না।
সিআইডি-র মালদা জোনের ডিএসপির মাধ্যমে পেশ করা হলফনামা দেখে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা বলছেন, যে কোনও রাজ্য প্রশাসনই সিবিআই তদন্ত এড়াতে রাজ্য পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করছে বলে দাবি করে। কিন্তু মামলাকারীরা রাজ্যপালের বিবৃতিতে ভরসা করছেন বলে আঙুল তোলার নজির বিশেষ নেই। হলফনামার মাধ্যমে রাজ্য প্রশাসন পরোক্ষে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে রাখল বলে আইনজীবীদের মত। মঙ্গলবার বিচারপতি অশোক ভূষণের বেঞ্চে এই মামলার রাজ্যের বক্তব্যের ভিত্তিতে মামলাকারীরা পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য সময় চেয়েছেন। দু’সপ্তাহ পরে ফের শুনানি হবে।