আষাঢ়ে এল সবচেয়ে তাপের দিন

চলতি গ্রীষ্মে লু-এর দাপট মাত্রা ছাড়ায়নি দুই জেলায়। প্যাচপ্যাচে গরমটা শুরু হয়েছে কয়েক দিন হল। রবিবার বাঁকুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পুরুলিয়ার ৪০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৮ ০২:০৯
Share:

গনগনে: লু-এর দাপটে ফাঁকা পুরুলিয়া শহরের রাঁচী রোড। রবিবার। ছবি: সুজিত মাহাতো

ক্যালেন্ডারের সঙ্গে যেন রসিকতা করছে প্রকৃতি। বাঁকুড়ায় মরসুমের সবচেয়ে গরম দিনটা এল আষাঢ়ে। কালবৈশাখীর দৌলতে বৈশাখ, জৈষ্ঠ ভালয় ভালয় পার করে দুই জেলার বাসিন্দাদের আষাঢ়ের ‘ধূপেতে কলিজা ফাটে’। বিষ্ণুপুরের বধূ রণিতা সেন, শ্রাবণী বসুরা বলছিলেন, ‘‘ইলিশ ভাপা খাওয়ার এটাই তো সময়। এ দিকে রান্নাঘরে ঢুকলে নিজেদেরই গরমে ভাপা হয়ে যাওয়ার জোগা়ড়। মনে হচ্ছে রাজস্থানে আছি। জানলা দিয়ে মুখ বাড়ালে দেখব উট চলেছে।’’

Advertisement

চলতি গ্রীষ্মে লু-এর দাপট মাত্রা ছাড়ায়নি দুই জেলায়। প্যাচপ্যাচে গরমটা শুরু হয়েছে কয়েক দিন হল। রবিবার বাঁকুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পুরুলিয়ার ৪০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আষাঢ়ের গোড়ায় তাপমাত্রা শেষ কবে চল্লিশ ছাড়িয়েছিল, মনে করতে পারছেন না পুরুলিয়ার প্রবীণ বাসিন্দারা। রবিবার পুরুলিয়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েক বছরে রুখা পুরুলিয়ার গরমের চরিত্র বদল হয়েছে। ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা এই জেলায় গরমে লু বইত। রাতে স্বস্তি ফিরত কিছুটা। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আর্দ্রতা বাড়ায় অস্বস্তি বেড়েছে। বৈশাখ ও জৈষ্ঠে জেলায় কয়েক দিনের জন্য তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছিল। তবে মাঝেমধ্যেই ঝড়, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি হয়েছে। জুনের মাঝামাঝি এসে দেখা যাচ্ছে, পারদ চল্লিশ ছাড়াচ্ছে, এ দিকে বৃষ্টির দেখা নেই।

Advertisement

গরমের সতর্কতা

• দিনের মধ্যে বেশ কয়েক বার স্নান করা যেতে পারে।

• ফুটি, শসার মতো জল-যুক্ত ফল বেশি করে খাওয়া দরকার।

• ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। রোদচশমা আর ছাতা নিয়ে বাইরে বেরনো ভাল।

• জলে নুন বা ওআরএস মিশিয়ে খাওয়া চাই।

• ভারী আর মশলাদার খাবার একেবারে নয়।

• রোদ থেকে এসেই ঠান্ডা জল খাওয়া যাবে না।

• যতটা পারা যায় রোদ থেকে দূরে থাকা দরকার।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুরুলিয়ার কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকেই ফের রোদের তেজ বেড়েছে। শনি ও রবিবার বৃষ্টির জন্য হাপিত্যেশ করে বসেছিলেন সবাই। প্রত্যাশায় জল ঢেলে আরও বেড়েছে তাপ আর আর্দ্রতা।

শুক্রবার বাঁকুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার সেটা কমে দাঁড়িয়েছিল ৩৭.৯ ডিগ্রিতে। কিন্তু আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৪৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়ে যায় ৬৭ শতাংশ। পাখার নীচে বসলে যতটুকু স্বস্তি মিলছিল, সেটুকুও গায়েব হয়ে যায়। রবিবার লুয়ের দাপট না থাকলেও প্রবল গরম আর ৬৯ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতায় নাজেহাল হয়েছে বাঁকুড়া। শহরের টোটো চালক প্রবীর ঘোষ বলেন, “হাঁসফাঁস করছি। মাথায়, গায়ে ঘন ঘন জল ঢেলেও স্বস্তি পাচ্ছি না।”

এ দিন বেলা একটু বাড়তেই দুই জেলার রাস্তাঘাট সুনসান হয়ে গিয়েছিল। পুরুলিয়ায় ছিল লু-এর দাপট। গরমে বাসের যাত্রী সংখ্যা কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে বলে দাবি পুরুলিয়ার বাস মালিক সমিতির। সমিতির জেলার সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘দুপুর ১২টার পরে লোকজন খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোচ্ছে না। বিকেল পর্যন্ত হাতে গোনা যাত্রী নিয়ে বাস চলছে।’’

পুরুলিয়া শহরে রবিবার বাজার বন্ধ থাকে। এ দিন গরমের চোটে শহরে প্রায় অঘোষিত বন্‌ধের চেহারা ছিল। ট্যাক্সি স্ট্যান্ড, কোর্ট মোড়, পোস্টঅফিস মোড়, চকবাজার— সব খাঁ-খাঁ। মহকুমা সদর রঘুনাথপুর ও ঝালদাতেও তা-ই। ঝালদার দুর্গা মন্দির লাগোয়া মাঠে দু’টি দলের ক্রিকেট ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। গরমের চোটে খেলা বাতিল হয়েছে। অভিজিৎ কেশরী, সূরজ সাও, শান্তিরাম সূত্রধররা বলেন, ‘‘সকাল ৯টা থেকে খেলা ছিল। তখনই মাঠে দাঁড়ানো যাচ্ছিল না। বেলা বাড়লে কী অবস্থা হবে বুঝেই খেলা বন্ধ করে দিয়েছি।”

গরমে কাহিল ছুটির দিনের বাজারও। বিষ্ণুপুরের বাজারে এক হাতে ছাতা ধরে আর এক হাতে রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বৃদ্ধ অসিত রায় মাছ বিক্রেতাকে বলছিলেন, ‘‘আজ আর বড় মাছ নয়। পটল দিয়ে চারাপোনার ঝোল।’’

জেলা জুড়েই ছবিটা ছিল এই রকমের। বাঁকুড়ার চকবাজারের মাছ বিক্রেতা বিপত্তারণ ধীবর বলেন, “বড় মাছের বিক্রি কমে গিয়েছে। এই গরমে মানুষ ছোট মাছ বেশি পছন্দ করছেন। চারাপোনা, চুনোমাছ বেশি বিক্রি হচ্ছে এখন।” বাঁকুড়ার কালীতলার মাংস বিক্রেতা নরেশ দাস, পুরুলিয়ার ঝালদার বুকা বাগদিরা বলেন, “আর পাঁচটা রবিবারের মতো এ দিন ভিড় ছিল না। গরমে অনেকেই মাংস খেতে চাইছেন না।’’

ঝালদা পুরসভার সামনে চা বিক্রি করেন রঞ্জিত কান্দু। বেলা ১১টা নাগাদ দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। তবে দুই জেলাতেই আখের রস আর আইসক্রিম বিক্রি হয়েছে রমরমিয়ে। বিষ্ণুপুরে বড় জল ভরা ডাবের দর ছিল পঁচিশ থেকে পঁয়ত্রিশ টাকা। পাতি লেবুর চাহিদা সামলাতে হিমসিম খেয়েছেন বিক্রেতারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement