শনিবার ধর্মতলায় চিকিৎসকদের অনশনমঞ্চ। —নিজস্ব চিত্র।
অনশনের ১৬০ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রয়েছেন আরজি করের অনশনরত জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো। তবু ধর্মতলার অনশনমঞ্চে এখনও অনড় ছয় আন্দোলনকারী। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলেও মনোবল এখনও অটুট। তার উপর শুক্রবার রাতে অনশনে যোগ দিয়েছেন আরও দুই চিকিৎসক। সব মিলিয়ে কেমন আছেন অনশনকারীরা?
আপাতত দিনে দু’বার করে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হচ্ছে তাঁদের। সে সব পরীক্ষার রিপোর্ট বলছে, সকলেরই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। মাথা ঘুরছে, কমছে রক্তের শর্করার মাত্রা। রক্তচাপ, পাল্স রেট ওঠানামা করছে। দেখা দিচ্ছে কিডনির সমস্যাও। ফলে অনশনকারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন ডাক্তার থেকে সাধারণ মানুষ— সকলেই।
১০ দফা দাবিতে গত ৫ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টা থেকে ধর্মতলায় আমরণ অনশন শুরু করেছেন কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের ছয় জুনিয়র ডাক্তার। তাঁরা হলেন তনয়া পাঁজা, স্নিগ্ধা হাজরা, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, অর্ণব মুখোপাধ্যায় এবং পুলস্ত্য আচার্য। গত রবিবার অনশনে যোগ দেন আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতোও। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে আরজি করের সিসিইউতে চিকিৎসা চলছে তাঁর। বৃহস্পতিবার রাতের তুলনায় শুক্রবার তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে সময় লাগবে। আপাতত পর্যবেক্ষণে রয়েছেন অনিকেত। শুক্রবার জুনিয়র ডাক্তারদের মিলিত মঞ্চের তরফে চিকিৎসক দেবাশিস হালদার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন, ‘‘এখন অনিকেতের অবস্থা স্থিতিশীল। রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। অনিকেত হাসপাতালে ভর্তি হতে নারাজ ছিল। কিন্তু আমরা ওকে বুঝিয়ে ভর্তি করাই। সরকার অমানবিক হতে পারে। তবে আমাদের সহকর্মীদের শারীরিক অবস্থার বিষয়টা দেখতে হবে।’’
শুক্রবার রাতে নতুন করে অনশনে যোগ দিয়েছেন আরও দু’জন। তাঁরা হলেন পরিচয় পণ্ডা এবং আলোলিকা ঘোড়ুই। পরিচয় শিশুমঙ্গল হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। তিনি ওই হাসপাতালের ইএনটি (নাক, কান, গলা) বিভাগের পিজিটি-র দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া। আর কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রথম বর্ষের পিজিটি আলোলিকা। অর্থাৎ বর্তমানে ওই মঞ্চে অনশনরত চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আটে। তবে শনিবার সকালে আন্দোলনকারী চিকিৎসক ঊর্মিমালা মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘আমাদের অনশনকারীদের সংখ্যাটা কিন্তু ১০। উত্তরবঙ্গেও আমাদের দুই ভাই অনশনে বসে রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গেও ফোনে কথা হয়েছে। তাঁরা সুস্থ আছেন। আমরা তাঁদেরকে কলকাতা আসতে অনুরোধ করেছিলাম, তাঁরা আসতে চাননি। তাঁরা মানুষকে বোঝাতে চান, এই আন্দোলন শুধু কলকাতার নয়। এই আন্দোলন সারা বাংলার।’’
তা হলে কেমন আছেন অনিকেত ছাড়া ধর্মতলার বাকি আট অনশনকারী? ঊর্মিমালা জানালেন, ‘‘অনশনকারীরা সকলেই বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছেন। সকলেরই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। ইউরিনে কিটোন বডি পাওয়া গিয়েছে। তার মাত্রাও ক্রমশ বাড়ছে।’’ দিনে দু’বার করে তাঁদের রক্তচাপ, নাড়ির গতি, ক্যাপিলারি ব্লাড গ্লুকোজ (সিবিজি) মাপা হচ্ছে। শনিবার সকালেও অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়েছে। অনশনমঞ্চে টাঙানো বোর্ডে লেখা হয়েছে তাঁদের স্বাস্থ্যপরীক্ষার সেই রিপোর্ট।
অনশনকারীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষার রিপোর্ট। — নিজস্ব চিত্র।
এক নজরে, অষ্টম দিনে কার শারীরিক অবস্থা কী রকম?
অর্ণব মুখোপাধ্যায়, পিডিটি প্রথম বর্ষ, এসএসকেএম
রক্তচাপ ১২০
নাড়ির গতি ৯৭
রক্তে শর্করার মাত্রা (সিবিজি) ৬৭
অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, পিডিটি প্রথম বর্ষ, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ
রক্তচাপ ১১৮/৯৪
নাড়ির গতি ৮৪
রক্তে শর্করার মাত্রা (সিবিজি) ৬৬
সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, পিজিটি তৃতীয় বর্ষ, কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ
রক্তচাপ ছিল ১০৮/৮০
নাড়ির গতি ৮৪
রক্তে শর্করার মাত্রা (সিবিজি) ৬৯
স্নিগ্ধা হাজরা, সিনিয়র রেসিডেন্ট, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ
রক্তচাপ ১১০/৭০
নাড়ির গতি ৮৮
রক্তে শর্করার মাত্রা (সিবিজি) ৬৪
তনয়া পাঁজা, ইএনটি সিনিয়র রেসিডেন্ট, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ
রক্তচাপ ১০৪/৭৮
নাড়ির গতি ৯৬
রক্তে শর্করার মাত্রা (সিবিজি) ৭৩
পুলস্ত্য আচার্য, পিজিটি প্রথম বর্ষ, এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ
রক্তচাপ ১০৮/৭৮
নাড়ির গতি ১১০
রক্তে শর্করার মাত্রা (সিবিজি) ৭০