মেডিক্যাল কলেজে ঘেরাও কর্মসূচি।—নিজস্ব চিত্র।
অবস্থান-বিক্ষোভ শুক্রবার দুপুরে ঘেরাও কর্মসূচির আকার নিতে সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ভবনে জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করলেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে জুনিয়র চিকিৎসকদের বক্তব্য খতিয়ে দেখতে আট সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। তবে, জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে অর্ণব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্তাদের কথা শুনে মনে হল, কোভিড নিয়ে ওঁরা যতটা চিন্তিত, নন-কোভিড নিয়ে সেই মাথাব্যথা নেই। তাতে আমরা মর্মাহত। যা-ই হোক, বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে শান্তিপূর্ণ অবস্থান চলবে।’’
গত ৭২ ঘণ্টার অবস্থান-বিক্ষোভের মূল বক্তব্য দু’টি। এক, মেডিক্যাল কলেজের মতো চিকিৎসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুধু কোভিড রোগীর চিকিৎসা হলে নন-কোভিড রোগীর সঙ্গে সম্পর্কিত চিকিৎসাশাস্ত্রের পঠনপাঠনের কী হবে? দুই, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চারটি বিল্ডিং কোভিড চিকিৎসার জন্য পরিকাঠামোগত ভাবে উপযুক্ত নয়। তা হলে দু’টি ব্লক বাদে বাকি বিল্ডিংগুলিতে নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা কেন হবে না?
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, এ দিন স্বাস্থ্যসচিব-সহ দফতরের অন্য আধিকারিকদের উপস্থিতিতে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন জুনিয়র চিকিৎসকদের সাত প্রতিনিধি। কোভিড হাসপাতালে পরিণত হওয়ার পরে কী ভাবে সব ক’টি বিভাগে নন-কোভিড রোগীর সংখ্যা কমেছে, তা পরিসংখ্যান দিয়ে স্বাস্থ্য কর্তাদের জানানো হয়। তাঁরা জানান, জানুয়ারিতে সার্জারি বিভাগে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৩১৬টি অস্ত্রোপচার হয়েছে। অস্থি বিভাগে সেই সংখ্যা ২৮৯। সেখানে পরবর্তী ৯০ দিনে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা মাত্র দুই!
আরও পড়ুন: রাজ্যে এক দিনে রেকর্ড করোনা আক্রান্ত-মৃত্যু
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, সচিব জানান, চারটে বিল্ডিংয়ে কেন কোভিডের চিকিৎসা সম্ভব নয় তা খতিয়ে দেখতে, কোভিড হাসপাতালে নন-করোনা রোগী ভর্তি হলেও কী ভাবে সংক্রমণের সম্ভাবনা ঠেকানো যাবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রয়োজন। নবগঠিত কমিটি এই দুই প্রশ্নে রিপোর্ট দেবে। অবস্থান তুলে নেওয়ার আর্জিও জানানো হয়। সেই কমিটিতে চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষ, বিভূতি সাহা, গোপালকৃষ্ণ ঢালির পাশাপাশি মেডিক্যালের শিক্ষক-চিকিৎসক প্রতিনিধি হিসেবে প্লাবন মুখোপাধ্যায়, অসীম কুণ্ডু-সহ জুনিয়র চিকিৎসকদেরও দু’জন প্রতিনিধি রয়েছেন।
এ দিন দুপুরে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য এবং মেডিক্যাল এডুকেশনের বিশেষ সচিব তমালকান্তি ঘোষ মেডিক্যালে ঢোকা মাত্র ঘেরাও শুরু করেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। এক সময় সমাধানের খোঁজে জুনিয়র চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য ভবনে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় হয় বৈঠক। সেখানে তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা শান্তুনু সেনও ছিলেন।
শিক্ষক-চিকিৎসকদেরও বড় অংশের বক্তব্য, মেডিক্যাল কলেজে কোভিড চিকিৎসাশাস্ত্রের অন্যতম বিষয় হতে পারে, একমাত্র বিষয় হতে পারে না। তাঁরা জানান, নন-কোভিড রোগী না থাকলে ছাত্রছাত্রীদের ক্লিনিক্যাল শিক্ষার কী হবে? এক শিক্ষক-চিকিৎসকের কথায়, ‘‘ফিজিয়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, ফার্মাকোলজিতে গবেষণা, শিক্ষা প্রায় শূন্য। রুমের মধ্যে শুধু থিয়োরি এবং অনলাইনে কিছু ক্লাস হওয়া মানেই কি ডাক্তারি?’’ তাঁরা জানান, যাঁরা অবস্থানে বসেছেন, তাঁরা মেধা তালিকার উপরের দিকে থাকা ছাত্রছাত্রী। অন্য মেডিক্যাল কলেজে তাঁদের সহপাঠীরা এগিয়ে গেলে তা মেনে নেওয়া কঠিন।
আগামিদিনে শয্যা বৃদ্ধির কথা ভেবে মেডিক্যাল কলেজকে কোভিডের জন্য প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বলে রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছিল। শিক্ষক-চিকিৎসকদের পাল্টা যুক্তি, মেডিক্যালের দু’টি অ্যানেক্স হাসপাতাল নিলেও করোনার চিকিৎসায় ৮০০ শয্যা পাওয়া যাচ্ছে। বাকি মেডিক্যাল কলেজগুলিতেও ২০০-২৫০ শয্যার ওয়ার্ড কেন তৈরি করা হচ্ছে না?