ফাইল চিত্র।
রাজ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অপ্রতুল। এই অবস্থায় সরকারি হাসপাতালে বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাজের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত ঘিরে বিতর্ক বেধেছে।
স্বাস্থ্য ভবন ‘অ্যাডভাইজ়রি’ দিয়ে জানিয়েছে, বেসরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাও বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলির সঙ্গে যুক্ত হয়ে সরকারি পরিষেবার অঙ্গ হতে পারবেন। মেডিক্যাল কলেজে পড়ানোর কাজেও যোগ দিতে পারেন তাঁরা। স্বাস্থ্য ভবনের এই ‘পরামর্শ’ আখেরে সরকারি চিকিৎসা পরিকাঠামোর ক্ষতিই করবে বলে মনে করছে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন।
স্বাস্থ্য ভবনের ‘পরামর্শে’ বলা হয়েছে, অনেক বেসরকারি চিকিৎসক সম্প্রতি সরকারি হাসপাতালের শিশু শল্য, স্নায়ু শল্য, হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগে কাজ করতে চেয়ে আবেদন করেছেন। ওই সব আবেদন সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এসএসকেএমের বেশ কিছু বিভাগে সরকারি পরিষেবার সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালের কয়েক জন চিকিৎসক ইতিমধ্যেই যুক্ত হয়েছেন। এসএসকেএমেরই এক অভিজ্ঞ চিকিৎসক স্বাস্থ্য ভবনের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না। তাঁর প্রশ্ন, বাইরের চিকিৎসক তো অস্ত্রোপচার করে চলে যাবেন। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরে রোগীর দায়িত্ব কে নেবেন? সরকারি হাসপাতালে ইউনিট ভাগ করে রোগীদের পরিষেবা দেওয়া হয়। ইউনিটে বেসরকারি চিকিৎসকের ভূমিকা, তাঁর পদপর্যাদা কী হবে, তা-ও স্পষ্ট হওয়া উচিত। অ্যাডভাইজ়রিতে বলা হয়েছে, এই পরিষেবার জন্য সপ্তাহে তিন দিন প্রতি ঘণ্টায় দেড় হাজার টাকা পাবেন বেসরকারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। প্রতিদিন সর্বাধিক ছ’ঘণ্টা পরিষেবা দিতে পারবেন তাঁরা। এসএসকেএমের অভিজ্ঞ চিকিৎসকের বক্তব্যের সঙ্গে সহতম পোষণ করে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের এক বিভাগীয় প্রধান বলেন, ‘‘এই ধরনের নীতি গ্রহণ করা মানে সরকারি চিকিৎসকদের প্রতি অন্যায় করা। সরকারি হাসপাতালে প্রচুর রোগী। নিজেদের স্বার্থে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা কাজে যোগ দিলেও তাঁরা রোগীদের দায়িত্ব নেবেন কি?’’
সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘এ রাজ্যে প্রতি বছর তিন হাজার ছাত্রছাত্রী এমবিবিএস পাশ করছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা ১৩০০। এর পরেও বেসরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্র থেকে চিকিৎসক আমদানি করতে হচ্ছে কেন? আসল কথা হল, স্বাস্থ্য দফতরের ভ্রান্ত নীতির কারণে কেউ সরকারি হাসপাতালে কাজে যোগ দিতে চাইছেন না। সেই জন্য নতুন নামে নির্দেশিকা দিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে বেসরকারি চিকিৎসকদের ঢোকানো হচ্ছে। মনোভাব না-বদলালে চিকিৎসকের সঙ্কট মিটবে না।’’
কটাক্ষের সুরে অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টরসের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটার বক্তব্য, ধার করে সংসার আর কত দিন চলবে! যেখানে পরিকাঠামো নেই, সরকারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেখানে ফেলে রাখা হয়েছে। আর ভাল পরিষেবা দেওয়ার নামে বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে চিকিৎসক আনতে হচ্ছে। ‘‘কেন চিকিৎসকেরা সরকারি হাসপাতালে আসতে চাইছেন না, সেই মূল সমস্যার ভিতরে কেউ ঢুকছেন না। এ-সব পরামর্শ দিয়ে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার বেসরকারিকরণের চেষ্টা চলছে,’’ বলেন মানসবাবু।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সম্পাদক কৌশিক চাকীর মন্তব্য, শুধু অস্ত্রোপচারের জন্য ডাক্তার এনে কী হবে! রাজ্য জুড়েই তো অ্যানাস্থেটিস্ট ও নার্সের অভাব। তার সুরাহা না-হলে কোনও ভাবেই সমস্যা মিটবে না।