শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
কবি শ্রীজাতকে কী আর কখনও অভিনয় করতে দেখা যাবে? কবি জানালেন, জরুরি প্রয়োজন না পড়লে আর অভিনয় করবেন না তিনি।
সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত জুলফিকার ছবিতে ত্রিভূবন গুপ্তের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শ্রীজাত। তার পর আর তাঁকে অভিনয় করতে দেখা যায়নি, কেন? আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক লাইভে শ্রীজাত হাসি মুখে বলেন, ‘‘জীবনে বন্ধুরাই আমার সর্বনাশ করেছে। তার মধ্যে এক জন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। সৃজিত অবশ্য ওই ছবিতে আমাকে নিয়ে নিজেরও কিছুটা সর্বনাশ করেছে। যে যে দৃশ্যে আমি আছি, সেগুলো তাকিয়ে দেখা যায় না, এত খারাপ কাজ করেছি। আমি তো ওকে বলেছিলাম, আমি অভিনয় পারি না, তবু তুমি কেন আমাকে নিচ্ছ? ও বলেছিল, না, আমাকে দিয়েই ও কাজ করিয়ে নিতে পারবে।’’
ঠাট্টার ভঙ্গিতে জুলফিকারের স্মৃতি পেরিয়ে এসে শ্রীজাত স্পষ্টতই জানালেন আর অভিনয় না করার আসল কারণ। তিনি বললেন, ‘‘অভিনয়ের দিক থেকে আমার মোটেই নিজেকে ঠিকঠাক মনে হয় না। আমি অভিনয়ে আগ্রহী নই। তবে আমার একটা ভাবনা আছে। শিল্পের যে কোনও শাখায় যদি কোনও ডাক আসে, আমি ঝুঁকি নিতে রাজি হই। আমার সব সময় মনে হয়, কেউ তো খুন করতে বলছে না বা চোরাচালান করতে বলছে না বা মাদক পাচার করতে বলছে না। বলছে, একটু অভিনয় করবেন? সঞ্চালনা করবেন? বা বিজ্ঞাপনে মুখ দেখাবেন? এগুলো তো সবই শিল্পের নানা অঙ্গন। তবে আমি অভিনয়ে গিয়ে বুঝেছি, এটা আমার স্থান নয়। তাই তেমন কোনও জরুরি প্রয়োজন না হলে আমি আর অভিনয় করতে পারব না।’’
অভিনয় না করলেও ছবি তৈরি করতে এগিয়ে এসেছেন শ্রীজাত। কাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হন তিনি? এই প্রশ্নের উত্তরেও প্রথমে ঠাট্টার সুর। তার পর তিনি বললেন, ‘‘নামগুলো যখন শুনবেন, তার পর যখন আমার ছবি দেখতে আসবেন, তখন খুবই খারাপ লাগবে। আমার প্রিয় পরিচালকের তালিকায় যেমন আন্দ্রেই তারকোভস্কি আছেন, লুই বুনুয়েল আছেন, ওয়াংকার ওয়াই আছেন। সেই তালিকায় মৃণাল সেন, তপন সিংহ, সত্যজিৎ রায় আছেন। দেশ-বিদেশের অনেক পরিচালক আছেন। ফলে এঁদের সবার ছবি আমাকে দিশা দেখিয়েছে। আমি খুব তাকিয়ে থাকি ক্রিস্টোফার নোলান ও ইনারিতু-র দিকে। এই ভাবেই বড় হয়েছি।’’
এর পর আসে ‘মানবজমিন’ প্রসঙ্গ। অভিনয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী না হলেও অভিনয় করিয়ে নেওয়ায় পরিচালক-সুলভ দক্ষতায় তাঁকে পৌঁছতে হয়েছে? মানে ছবি তৈরির পরিকল্পনার সময় তো অভিনয়, ফ্রেম মাথায় থাকে, সেই ভাবনাটা নিয়ে তিনি কতটা আত্মবিশ্বাসী? জবাবে শ্রীজাত বললেন, ‘‘আমি খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, এমনটা বলব না। কিন্তু আমি যখন অভিনেতাদের সঙ্গে বসি, চিত্রনাট্য পড়া হয়, তখন আত্মবিশ্বাস পাই। যে অভিনেতারা রাজি হয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা অনেক। অনেক সময় আমাকে বলেই দিতে হয়নি, শুনে তাঁরাই বলেছেন, চরিত্রটা কী ভাবে ভাবছেন। এতটাই অভিজ্ঞ তাঁরা। আমার মনে হয় ফ্লোরে আমি ওঁদের থেকে শিখতে পারব অনেক কিছু।’’