বগটুই গ্রামের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার আগে বরণ করা হচ্ছে। শনিবার রামপুরহাটে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
এখনও পুরনো ছন্দে ফেরেনি গ্রাম। ২১ মার্চ রাতের গণহত্যার স্মৃতি একেবারেই টাটকা। গ্রামে সিবিআই, পুলিশের দিনভর আনাগোনা। এমন এক গুমোট পরিবেশের মধ্যেও বগটুই গ্রামের উচ্চ মাধ্যমিক এবং একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার্থীদের অনেকে নিজেরাই গ্রাম থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে গেল। নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরল।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর বগটুই গ্রাম থেকে মোট ২৬ জনের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা। কিন্তু, চার জন পরীক্ষায় ফর্ম পূরণ না-করায় ২২ জন উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছে। এদের মধ্যে ১৩ জন ছাত্রী ও ৯ জন ছাত্র। অন্য দিকে, একাদশ শ্রেণির মোট ৬১ জন পরীক্ষার্থী।
সকলে যাতে নির্ভয়ে তাদের স্কুলে গিয়ে নিজ নিজ পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে পারে তার জন্য জেলাশাসক বিধান রায়, রামপুরহাটের মহকুমাশাসক সাদ্দাম নাভাস গ্রামে গিয়ে পরীক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তাদের সঙ্গে দেখা করে নির্ভয়ে পরীক্ষা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এসেছেন। পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনও রকম অসুবিধা না হয়, তার জন্য
সংশ্লিষ্ট বিডিও এবং থানাকেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
বগটুইয়ের পরীক্ষার্থীদের একাংশও নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আর্জি জানিয়ে মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন জানায়। ওই ছাত্রছাত্রীদের জন্য রামপুরহাটের একটি বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ব্যবস্থা করা হয়। থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের নিজের নিজের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাসেরও ব্যবস্থা করা হয়। পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ২৭ জন পুলিশ কর্মী পাহারায়
রয়েছেন সেখানে। গ্রামের জনা বারো ছাত্রছাত্রী ওই শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে এসেছে। বাকিরা গ্রাম থেকেই এ দিন পরীক্ষা দিয়েছে।
এ দিন সকালে ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে হাতে একটি করে গোলাপ ফুল দেওয়া হয়। বাসে চেপে তারা পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছয়। অন্য দিকে, রামপুরহাট ১ ব্লকের পক্ষ থেকে বগটুই গ্রামে থেকে যাওয়া পরীক্ষার্থীদের জন্য গাড়ি পাঠানো কিন্তু, মাত্র দু’জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী প্রশাসনের গাড়িতে তাদের পরীক্ষাকেন্দ্রে আসে।
উচ্চ মাধ্যমিক এবং একাদশ শ্রেণির অধিকাংশ পরীক্ষার্থী নিজেদের মতো করে মোটরবাইকে, টোটোয় কিংবা অভিভাবকদের সঙ্গে এ দিন পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছেছে। তাদের বক্তব্য, রোজা শুরু হচ্ছে। রমজান মাসে রোজার সময় বাইরের পরিবেশে থাকাটা ঠিক হবে না বলেই অনেক পরীক্ষার্থী গ্রাম থেকেই পরীক্ষা দিচ্ছে। গ্রাম থেকে পরীক্ষা দিতে তাদের কোনও অসুবিধা হয়নি বলেও
তারা জানিয়েছে।