অভিযোগের আগেও অভিযোগ ছিল। ভাঙড়ে রমেশ ঘোষালের হত্যাকাণ্ডে তাঁর স্ত্রীর সেই প্রথম অভিযোগপত্র এবং তার তদন্তের কী হল, রাজ্য সরকারের কাছে তা জানতে চেয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দাখিল করে আদালতকে তা জানাতে হবে বলে বুধবার জিপি বা গভর্নমেন্ট প্লিডারকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত।
অভিযোগকারিণীর আঙুল সম্প্রতি তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া আরাবুল ইসলামের দিকে। ভাঙড়ে শাসক দলের গোষ্ঠী-কাজিয়ার জেরেই রমেশবাবু খুন হন। ওই অঞ্চলের তখনকার প্রবল পরাক্রান্ত নেতা আরাবুলই আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে তাঁকে অভিযোগপত্রের বয়ান বদলাতে বাধ্য করিয়েছিলেন বলে নিহতের স্ত্রীর অভিযোগ। পরিবর্তিত অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তে এগোয়। কিন্তু বিচারপতির প্রশ্ন, এই মামলার আবেদনকারিণীর প্রথম অভিযোগের কী হল?
২০১৪-র ২৫ অক্টোবর কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকায় রমেশবাবুকে গুলি করে মারা হয়। তাঁর সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আরও এক জন। রমেশবাবুর স্ত্রী আশাদেবী থানায় গিয়েছিলেন। আশাদেবীর অভিযোগ, তিনি যখন থানায় যান, আরাবুল সেখানে বসে ছিলেন। যারা তাঁর স্বামীকে খুন করেছে বলে ওই মহিলার অভিযোগ, তাদের নাম দিয়ে তিনি পুলিশকে চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু সেই চিঠি ছিঁড়ে ফেলা হয় বলে আশাদেবী আদালতে জানিয়েছেন। ওই মহিলার আরও অভিযোগ, আরাবুল তাঁর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে প্রথম অভিযোগপত্রের বদলে অন্য একটি অভিযোগপত্র লিখিয়ে নেন। এবং পুলিশ সেটাই গ্রহণ করে।
আরাবুলের আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে তখনকার মতো পিছু হটলেও আশাদেবী দমেননি। যথাযথ তদন্ত চেয়ে ও মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে হাইকোর্টে মামলা করেন তিনি। ওসি, পুলিশ সুপার এবং নবান্নে এক আইজি-র কাছেও অভিযোগপত্র পাঠান। এ দিন আশাদেবীর আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ও শীর্ষেন্দু সিংহরায় জানান, পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করে তদন্তের নামে দায়সারা কাজ করেছে।
অভিযোগকারিণীর কৌঁসুলিদের বক্তব্য শোনার পরে মামলার নথিপত্র দেখে বিচারপতি দত্ত জিপি-র উদ্দেশে বলেন, রমেশবাবুর স্ত্রী তো থানার ওসি, জেলার পুলিশ সুপার এবং নবান্নে রাজ্য পুলিশের এক আইজি-র কাছেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন। দেখা যাচ্ছে, নবান্নে পাঠানো অভিযোগপত্রটি না-খুলেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যুক্তি দেখানো হয়েছিল, চিঠিতে প্রাপকের নাম ঠিকঠাক লেখা হয়নি। কেন অভিযোগকারিণীর চিঠিটি না-পড়েই ফেরত পাঠানো হল, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি দত্ত।
জিপি আদালতে জানান, পুলিশ ওই জোড়া খুনের মামলায় ইতিমধ্যেই কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে এবং চার্জশিটও পেশ করেছে। বিচারপতি দত্ত তখন তাঁকে বলেন, আশাদেবীর প্রথম অভিযোগ এবং যে-অভিযোগপত্রটি থানার ওসি, পুলিশ সুপার এবং নবান্নে পাঠিয়েছিলেন, তার কী তদন্ত হয়েছে, হলফনামা দিয়ে সেটাই জানাতে হবে।