Hariharpara

বিয়ে ঠেকাতে ১৩ কিমি হেঁটে বিডিওর কাছে

কিশোরী কোনও মতে কেবল বলতে পারে, ‘‘আমাকে বাঁচান স্যর! আমি পড়তে চাই।’’

Advertisement

মফিদুল ইসলাম 

হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২০ ০৫:১০
Share:

লকডাউনে যানবাহন কিছু নেই। বাবা, দাদার চোখে পড়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে, তাই বড় রাস্তা ধরেও যাওয়া যাবে না। কিন্তু বিডিও অফিসে যে পৌঁছতেই হবে।

Advertisement

মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার প্রদীপডাঙার নুরবানু খাতুন তাই ঘুরপথে এগোয়। একটি টোটোতে ডল্টনপুর পৌঁছয়। চৈত্রের রোদে তখন চারপাশ পুড়ে খাক। কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করে তার মধ্যেই হাঁটতে শুরু করে সে। ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে ১৩ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে হরিহরপাড়া বিডিও অফিসে যখন সে পৌঁছয়, তাকে দেখে আঁতকে ওঠেন বিডিও। সকাল থেকে তার পেটেও কিছু পড়েনি। হাঁটতেও হয়েছে লুকিয়ে লুকিয়ে। উদ্বেগে, পথশ্রমে ক্লান্ত ওই কিশোরী তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে কোনও মতে কেবল বলতে পারে, ‘‘আমাকে বাঁচান স্যর! আমি পড়তে চাই।’’

এই কিশোরী এ বারই নিশ্চিন্তপুর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক দিয়েছে। শুক্রবার রাতে সে জানতে পারে, তার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে। কয়েক দিন আগেও চেষ্টাটা হয়েছিল। তখনও সে বলেছিল, পড়তে চায়। চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। বাড়ির লোক শোনেননি। তখন স্থানীয় কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের কাছে যায় সে। তাঁরা বাড়িতে এসে ওই কিশোরীর বাবা-দাদাকে বুঝিয়ে বলেন। তখনকার মতো বাড়ির লোক রাজি হয়ে যান। মুচলেকাও লিখে দেন। কিন্তু লকডাউন শুরুর পরে ফের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়। বিডিও পূর্ণেন্দু সান্যাল বলেন, ‘‘সম্ভবত ভাবা হয়েছিল, লকডাউনের সময় কেউ কিছু জানতে পারবেন না।’’ কিন্তু সেই কিশোরী বেঁকে বসে। তাতেই রাগ বাড়ে বাবা-দাদার। ওই কিশোরীর বক্তব্য, ‘‘আমি কিছুতেই এখন বিয়ে করব না বলায় বাবা-দাদা আমাকে মারধর করে। অপমানে, যন্ত্রণায় সারা রাত ঘুমোতে পারিনি। সকাল হতেই বেরিয়ে পড়েছি।’’

Advertisement

ওই কিশোরী আর ঘরে ফিরতে চায়নি। তবে তাকে শেষ পর্যন্ত তার বাড়িতেই এ দিন পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বাবা, দাদা পেশায় কৃষিজীবী। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘পরিবারের লোকেদের সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিয়ের জন্য জোরাজুরি না করতে। কিশোরীর পড়াশোনার যাবতীয় দায় প্রশাসনের।’’

এলাকায় সাক্ষরতার হার বেশ কম। তবে গ্রামে পাকা রাস্তা রয়েছে। বিদ্যুৎও রয়েছে। নিশ্চিন্তপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত রায় বলেন, ‘‘নুরবানু লড়াই করে এগোলে, ওকে দেখে সারা এলাকার মেয়েরা পড়তে উৎসাহী হবে।’’ নুরবানুর কথায়, ‘‘যত যাই হোক, আমি পড়ব।’’ এ দিন বিডিও, পুলিশ আসায় গ্রামের লোক তার বাড়িতে ভেঙে পড়েছিল। সে সব মিটতে, নুরবানু ঘরে খিল দিয়েছে। পড়তে বসেছে। উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য কম সময় পাওয়া যায় যে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement