সমরেন্দুকে হেফাজতে নিচ্ছে সিবিআই। ছবি: প্রণব দেবনাথ
নদিয়ার নাবালিকা ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ধৃত তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য তথা মূল অভিযুক্ত ব্রজ গয়ালির বাবা সমরেন্দু গয়ালি এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ পীযূষ ভক্তকে তিন দিনের সিবিআই হেফাজতের আদেশ দিল রানাঘাট আদালত।
সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, নির্যাতিতার দেহ পুড়িয়ে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অন্যতম অভিযুক্ত সমরেন্দু ও তাঁর সঙ্গী পীযূষ। সিবিআই সূত্রে দাবি, মেয়েটি মারা যাওয়ার পরে সমরেন্দুর নির্দেশেই পীযূষ এবং সমরেন্দুর আর এক ঘনিষ্ঠ নির্যাতিতার বাড়িতে যান এবং মৃতদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য পরিবারের উপরে চাপ সৃষ্টি করেন। তদন্তকারীদের দাবি, পীযূষ এলাকায় জানিয়েছিলেন যে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে নির্যাতিতা নাবালিকা মারা গিয়েছে। পীযূষের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, গণধর্ষণ ও তার জেরে নির্যাতিতার মৃত্যু হয়েছে বলে যদি কেউ মুখ খোলে, তা হলে তাকে গ্রামছাড়া করার, এমনকি প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি।
তদন্তকারীদের দাবি, ভোরে মেয়েটির মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেই এক ঘনিষ্ঠ পঞ্চায়েত সদস্যকে বিষয়টি ‘সামলে নিতে’ বলেছিলেন সমরেন্দু।
সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়েছে, সমরেন্দুর প্রতিবেশী ও নির্যাতিতার বাড়ির এলাকার একাধিক ব্যক্তির বয়ান লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। শ্মশানে বাস করা এক প্রৌঢ়াকে একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদ ও বয়ান নথিবদ্ধ করা হয়। নির্যাতিতার বাবা-মা ও কয়েক জন আত্মীয় তথা শ্মশান যাত্রীর বয়ানও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ওই সব বয়ান পাওয়ার পরেই প্রথম দফায় সমরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর পর শুক্রবার সকাল থেকে সমর ও পীযূষকে মুখোমুখি বসিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার পরেই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তদন্তকারীদের দাবি, নির্যাতিতার মৃতদেহ পুড়িয়ে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের ঘটনায় আরও কয়েক জন জড়িত রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। ধাপে ধাপে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাদেরও ধরা হবে।
এ দিন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে ধৃতদের চার দিনের হেফাজতের আবেদন করা হয়। রানাঘাটের বিশেষ পকসো আদালতের বিচারক সুতপা সাহা তাঁদের তিন দিনের সিবিআই হেফাজতের আদেশ দেন। ৩ মে অভিযুক্তদের ফের আদালতে তোলার আদেশ দেন বিচারক। আদালত থেকে বেরিয়ে সিবিআইয়ের গাড়িতে ওঠার সময় সমরেন্দু গয়ালি বলেন, ‘‘এখন কিছু বলব না। যা বলার ৩ তারিখ বলব।’’
এ দিন আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী প্রবুদ্ধশীল রাও জানান, সমরেন্দু প্রভাবশালী। আরও কিছু তথ্যের জন্য তাঁকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। আগে যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই এঁদের নাম পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী আদালতে জানান, সমরেন্দু নাবালিকাকে চিকিৎসা করাতে বা ডাক্তারের কাছে নিতে বাধা দিয়েছিলেন এবং প্রভাব খাটিয়ে দেহ দ্রুত সৎকারের ব্যবস্থা করেন। যদিও এর আগে নাবালিকার মা জানিয়েছিলেন, গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে আসার পরে মেয়েকে মৃত অবস্থায় দেখেন। মৃতার মা অভিযোগে জানান, তিনি কিছু বোঝার আগেই শ্মশানে নিয়ে গিয়ে মেয়ের দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে তাঁর স্বামীর উপস্থিতিতে দেহ সৎকার করা হয়। সেখানে তিনি আরও অনেকের উপস্থিতির কথা তিনি লিখেছেন।
আদালতে এ দিন সমরেন্দুর আইনজীবী অপূর্ব বিশ্বাস বলেন, ‘‘যে এলাকার ঘটনা, সেখানকার বিধায়ক, সাংসদ বিজেপির। সমরেন্দু দলের কোনও পদে নেই, তিনি প্রধানও নন। কাজেই প্রভাবশালী হওয়ার বিষয়ও নেই।’’ তিনি আদালতে জানান, এ দিনও ডাকার পর সমরেন্দু হাজির হয়েছেন। পুলিশের নজরদারির মধ্যেই সমরেন্দু ছিলেন এবং তিনি সহযোগিতাও করছেন।